সিডরে পন্টুন ভেসে যাওয়ার ১৮ বছরেও চালু হয়নি ফেরি চলাচল, ভোগান্তি

৫ দিন আগে
সিডরে ফেরির পন্টুন ভেসে যাওয়ার দীর্ঘ ১৮ বছরেও চালু হয়নি পানগুছি নদীর কলারন-সন্ন্যাসী ফেরি চলাচল। নদীটি খরস্রোতা হওয়ায় পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলার ৩টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন নদী। ফলে তারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পানগুচি নদীতে কলারন-সন্ন্যাসী ফেরি ঘাটটি ভৌগোলিকভাবে ৩টি উপজেলার সংযোগস্থল হওয়ায় এ ঘাট ব্যবহার করে চলাচল করে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী এবং বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। তাছাড়া মোংলা থেকে এ পথে প্রচুর লোক যাতায়াত করায় এ রুটের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। ফলে ২০০৬ সালের ৪ আগস্ট এ পয়েন্ট দিয়ে চালু হয় ফেরি চলাচল।


কিন্তু চালুর এক বছর পর ঘূর্ণিঝড় সিডরে কলারন প্রান্তের ঘাটটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। এরপর প্রায় ১৮ বছর কেটে গেলেও চালু করা হয়নি পিরোজপুর রুটের ইন্দুরকানীর কলারন-বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ-মোংলা-শরণখোলা এ ফেরি ঘাটটি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হচ্ছেন এ পথে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ।


স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্ষা মৌসুমের বৈরী আবহাওয়ায় প্রায়ই বন্ধ থাকে খেয়া পারাপার। বর্ষার সময় নদীতে বেশি ঢেউ থাকায় ট্রলারে করে নারী ও শিশুদের নিয়ে নদী পারাপার অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। অসুস্থ রোগী ও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন।


কলারন এলাকার বাসিন্দা আব্দুল গফফার মিয়া বলেন, ‘এ ফেরিটি আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী তার সময় চালু করেছিল এ এলাকার মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য। কিন্তু চালুর এক বছর পরে ঘূর্ণিঝড়ে ফেরিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পরবর্তী সরকার এ ফেরি আর চালু করেনি। যেহেতু দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর এলাকায় বিগত বছরগুলোতে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি।’


এদিকে, পিরোজপুরের ওপারের বাগেরহাটের যাত্রীদের ট্রলারে করে নদী পাড় হয়ে কলারন ঘাট থেকে বাসে উঠে পিরোজপুর জেলা শহর এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। দুপাড়ের যাত্রী উঠানামার ঘাটটিও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। যাত্রীরা কোনোমতে উঠানামা করতে পারলেও মোটরসাইকেল উঠানামার ক্ষেত্রে থাকে প্রচুর ঝুঁকি। দুপাড়ের ঘাটের অবস্থা ভালো না থাকায় অনেক সময় নদীতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় যাত্রী সাধারণকে। বর্ষা মৌসুমে নদী উত্তল থাকায় বন্ধ থাকে খেয়া পারাপারও। ফেরি না থাকার কারণে গাড়ি পারাপার করতে হলে ৩০-৪০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে অপচয় হয় সময় ও অর্থের।


আরও পড়ুন: মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়ায় আবারও চালু হচ্ছে ফেরি


মোড়লগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘কলারন-সন্ন্যাসী ঘাটটির ব্যবহার করে ঢাকা যেতে আমাদের যেমনি সময় ও অর্থের আশ্রয় হয় তেমনি ভোগান্তিও কম হয়। কিন্তু এই ঘাটে ফেরি না থাকায় তাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে যেমনি সময় অপচয় হয় তেমনি অর্থেরও অপচয় হয়।’


তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে এ নদী পারাপার হতে হয় এবং মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। আমাদের দাবি, এখানে দ্রুত ফেরি সার্ভিস চালু করে দুই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা হোক।’


পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান জানান, বাগেরহাট জেলা প্রশাসন এবং পিরোজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।


অনেক দিন ধরে সংশ্লিষ্ট দফতরের চিঠি চালাচালিতেও ফেরি ঘাটটি পুনরায় চালু না হওয়ায় দুর্ভোগের শিকার এ পথে চলাচল দুই জেলার জনসাধারণ। এ ঘাটে পুনরায় ফেরি চালু হলে উপকৃত হবে দুই জেলার কয়েক লাখ মানুষ।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন