সারা দেশে বজ্রপাত ও পানিতে ডুবে একদিনে শিশুসহ ১৮ জনের মৃত্যু

৩ সপ্তাহ আগে
দেশের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাত ও পানিতে ডুবে শিশুসহ ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শনিবার (৩১ মে) সকাল থেকে রাত ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী-


ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ও নান্দাইলে আলাদা বজ্রপাতে দুই গরুসহ এক কৃষক ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।


মৃতরা হলেন- গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার লামকাইন গ্রামের হযরত আলী কারীর ছেলে সোহাগ মিয়া (৪০) ও নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের হযরত আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম (১২)।


দুপুরে গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার পাঁচভাগ ইউনিয়নের লামকাইন চর ও নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।


কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে এক হাঁসের খামারি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তার বড় ভাই। দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

 

আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে বজ্রপাতে শিশুসহ দুজনের মৃত্যু


মৃত মোবারক মিয়া (১৮) ও আহত ইমরান মিয়া (২২) কাঁঠালিয়া নয়া বাড়ির তাজুল ইসলামের ছেলে।


কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়া বজ্রপাতে নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।


হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বরাব্দা গ্রামে বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলো- স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আক্তার (৭) ও তার আপন ছোট ভাই নবিউর রহমান (৪)। তারা বরাব্দা গ্রামের আরজু মিয়ার সন্তান।


চুনারুঘাট থানার ওসি নুরে আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সাদিয়া ও নবিউরসহ কয়েকটি শিশু পুকুর পাড়ে বসে খেলছিল। এক পর্যায়ে তারা অসাবধানতাবশত পুকুরের পানিতে পড়ে তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

 

আরও পড়ুন: বাড়ছে বজ্রপাত আতঙ্ক, বছরে কাড়ছে ৩০০ প্রাণ


নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় মায়ের সাথে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে ১০ বছর বয়সী মীম আক্তার নিহত হয়েছে। বিকেলে উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিশুটি ডুমদি গ্রামের আলী উসমানের মেয়ে।


এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কেন্দুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান।


শেরপুরের নকলায় সমির উদ্দিন নামে কৃষক ও নালিতাবাড়ীতে এক বৃদ্ধাসহ বজ্রপাতে দুইজন মারা গেছে। দুপুর দুইটার দিকে নালিতাবাড়ীর কাকরকান্দি ইউনিয়ন মানিককুড়া ও নকলার টালকি ইউনিয়নের বড়পাগলা গ্রামে পৃথকভাবে এ ঘটনা ঘটে।


স্থানীয়রা জানান, দুপুরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এসময় নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের মানিককুড়া গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী তার নাতনিকে বাড়ির পাশের মাদ্রাসা থেকে বাড়ি নিয়ে আসার পথে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তবে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় নাতি।


একই সময়ে নকলা উপজেলার টালকী ইউনিয়নের বড়পাগলা গ্রামের কৃষক সমির উদ্দিন সমু (৫৮) মাঠে গরু আনতে যায়। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।


নালিতাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা ও নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
 

শেরপুরে রাস্তার পাশে ডোবার পানিতে ডুবে যমজ ২ বোনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের ছোটঝাউয়ের চর নামাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশুরা ওই গ্রামের রিকশা চালক মো. আব্দুস সালামের মেয়ে শিলা ও নীলা (১১)। তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোখলেছ আলী।

 

আরও পড়ুন: শেরপুরে বজ্রপাতে প্রাণ গেল দুজনের


কক্সবাজারের চকরিয়ায় কালভার্টের পানিতে ডুবে হুরে জান্নাত রাফি নামে ৫ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সকাল ৮টার দিকে বাড়ির পাশের কালভার্টের সম্মুখে পানিতে ডুবে মারা যায় রাফি। রাফি সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী নিবাসী রাসেল উদ্দিনের মেয়ে।
চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় একদিনে আলাদা স্থানে পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার চররমনী গ্রামে ও চররুহিতা গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে বলে জানান লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল।


মৃতরা হলো- উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের চররমনী গ্রামের সাঈদুল খোকনের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত (৪), একই এলাকার আব্দুল আসাদের ছেলে মো. আল-আমিন (৫) এবং চররুহিতা ইউনিয়নের চররুহিতা গ্রামের মো. সোহাগের দেড় বছর বয়সি মেয়ে আলিফা আক্তার।

 

ভোলার লালমোহনে পুকুরের পানিতে ডুবে এক পরিবারের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার ধলীগৌর নগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড চরকাঁলাচাদ (শাহাজী চৌমূহনী) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশুরা হলো- ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া বাড়ির হাচনাইনের ছেলে মিনহাজ (২) এবং সোহেলের মেয়ে নাফিজা (২)। সম্পর্কে তারা আপন চাচাতো ভাই বোন।


এছাড়া চাঁদপুরের মতলব উত্তরে বজ্রপাতে আলিফ নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় বজ্রপাতে আয়েশা খাতুন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।

 

আবহাওয়া অধিদফতর, দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ও ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য বলছে, প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতের ক্ষতি কমাতে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে জনসচেতনতা। সেই সঙ্গে বজ্রপাত মোকাবিলায় সারাদেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিরও পরামর্শ তাদের।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন