বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালে মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙা এলাকায় জোয়ারের পানিতে ডুবে ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
এ দিকে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ ও শুক্রবার (৩০ মে) ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ১-২ দিন থাকতে পারে বলে জানান কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান।
তিনি বলেন, ‘এই বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির তোড়ে প্লাবিত হয় কুতুবজোম, মাতারবাড়ির সাইরার ডেইল, ধলঘাটা ও ছোট মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল। লোকালয়ের রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও শত শত ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে ভেঙে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সকাল থেকে তীব্রভাবে চলছে লোডশেডিং। এতে লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি করছেন। সাগরের ওপর ঘনীভূত লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় হঠাৎই জোয়ারের পানি স্বাভাবিক চেয়ে দ্বিগুণ উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছোট মহেশখালীর মূল সড়ক। পানি ঢুকে পড়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে। অনেকের সম্পদ পানির তোড়ে ভেসে যায়। এ সময় জোয়ারের পানিতে ডুবে দানু মিয়া এক যুবকের মৃত্যু হয়।’
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, উপকূলজুড়ে বৃষ্টি
পরিবার সূত্র জানায়, দানু মিয়া মৃগী রোগে ভুগছিলেন। দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে কক্সবাজার উপকূলে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় জোয়ার হতে পারে। নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলের নিকটবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেইসঙ্গে ছোট ট্রলার ও নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, তিন নম্বর সতর্কসংকেত
সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় বদরখালী নৌ-চ্যানেলে অবস্থানরত বহু ফিশিং ট্রলারের জাল ছিঁড়ে গেছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলেরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তীরে ফিরে এসেছেন।
জেলেরা জানান, কয়েকদিনের খরচের জন্য সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন, কিন্তু উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের মুখে পড়ে প্রায় সব জাল ছিঁড়ে গেছে। তারা দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন।
জালিয়াপাড়া এলাকার সোনা মিয়া জানান, তার শেষ সম্বল ছিলো ঘরটি, সেটিও এখন সাগরে বিলীন হওয়ার পথে।
তিনি বলেন, 'নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি পরিবারের সবাইকে নিয়ে। ঘরটি সরিয়ে নেয়ার সামর্থ্য আমার নেই।’
আরও পড়ুন: ৬ অঞ্চলের নদীবন্দরে ২ নম্বর সংকেত
একই গ্রামের রহিমা বেগম বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এবার ঘরে পানি ঢুকে সব নষ্ট হয়ে গেছে। তারা জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে বেলা ১১টা থেকে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌরুটে সি-ট্রাক চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের সাগর তীরবর্তী এলাকাগুলোর মানুষজনকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্গত এলাকাগুলোতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেদায়েত উল্যাহ জানান, ‘উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে, একাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হচ্ছে এবং দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন।
তিনি আরও বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’