যেমন নারী-পুরুষের মিলনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম নেয়, মানবজাতির বিস্তার ঘটে; তেমনি নারী-পুরুষের সম্মিলিত দ্বীনি মেহনতের মাধ্যমেই দ্বীন বিস্তার লাভ করে। এ দায়িত্বে পুরুষ যেমন দায়ী, নারীও তেমনি সমানভাবে জিম্মাদার।
দ্বীনি পরিবেশ গঠনের গুরুত্ব
যদি আমরা ঘরগুলোতে সাদাসিধে জীবন অবলম্বন করি, বাহ্যিক সাজসজ্জার পরিবর্তে দ্বীনি আমলকে চালু রাখি, নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর জিকির, তবে আমাদের ঘর আখেরাতমুখী প্রশান্তির নীড় হবে।
আরও পড়ুন: মাটির সবচেয়ে গভীরে যে মসজিদ বিশ্বের বিস্ময়
সন্তানরাও ঐ পরিবেশেই বেড়ে উঠবে। কেননা, সন্তানদের প্রথম মাদরাসা হলো মায়ের কোলে ও ঘরের পরিবেশে। মায়ের দ্বীনি পরিবেশই সন্তানের প্রথম শিক্ষা।
হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক শিশু ফিতরাতের উপর জন্ম নেয়, পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি, নাসারা বা মাজুসি বানায়। (বুখারি: ১৩৮৫)
নারী: স্বামীর শান্তির উৎস
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তার নিদর্শনসমূহের একটি এই, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও।(সুরা আর-রূম: ২১)
স্বামী যখন ক্লান্ত অবস্থায় ঘরে ফেরে, স্ত্রীর ভালোবাসা ও আন্তরিকতা তার ক্লান্তি দূর করে দেয়। নবী করিম সা.-এর জীবনে হজরত খাদিজা (রা.) তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রথম ওহি নাজিলের সময় নবী করিম সা. ভয় ও উদ্বেগে কাঁপছিলেন। তখন খাদিজা (রা.) তাকে শান্তনা দিয়ে বলেছিলেন,
আপনি ঘাবড়াবেন না। আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করেন, অসহায়দের সহায়তা করেন, অতিথিকে আপ্যায়ন করেন এবং বিপদে মানুষের সাহায্য করেন। (বুখারি: ৩)
নারী যদি দ্বীনের পথে স্বামীর সহচর ও অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন, তবে সে শুধু ঘর নয়, সমাজকেও আবাদী করে তোলে।
সাদাসিধে জীবনই প্রশান্তির পথ
যে নারী স্বামীকে দুনিয়ার জিনিসের জন্য পেরেশান না করে বরং দ্বীনি কাজে উৎসাহিত করে, সে জীবনে শান্তি ও সুখ লাভ করে। শুকনা রুটিও যদি খেতে হয়, তবুও সেই জীবনে প্রশান্তি থাকে। কিন্তু দুনিয়ার লালসা কখনো পূর্ণ হয় না। যতই পাওয়া যাক, নতুন চাহিদা জেগে ওঠে, মৃত্যু পর্যন্তও তা শেষ হয় না।
দুনিয়ার খাহেশ ও মানবমনের অশান্তি
রসুল সা. একবার মাটিতে রেখা টেনে বলেছিলেন,
মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক, আর তার মৃত্যু এসে তাকে ধরে ফেলে। সে বলে, আমি অমুক কাজ শেষ করবো, অমুক কাজ করবো, অথচ মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়।(বুখারি: ৬৪১৭)
হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন,
মানুষের খাহেশ কখনো পূর্ণ হয় না। বরং যখন একটি পূর্ণ হয়, তখন আরেকটি চাহিদা জেগে ওঠে। (তাবাকাত ইবনে সা’দ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৩৪)
খাহেশ নয়, আখেরাতমুখী হৃদয় চাই
যদি মানুষ খাহেশের দাস হয়ে যায়, তার জীবন দুনিয়ার ফাঁদে আটকে যায়। কিন্তু যদি আখেরাতকে উদ্দেশ্য বানায়, আল্লাহ তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেন।
রসুল সা. বলেন,
যে ব্যক্তি আখেরাতকে উদ্দেশ্য বানায়, আল্লাহ তার মনকে পরিতৃপ্ত করেন, তার দুনিয়া তার কাছে এসে পড়ে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াকে উদ্দেশ্য বানায়, আল্লাহ তার দারিদ্র্যকে তার সামনে রাখেন এবং সে যতই চেষ্টা করুক, তার ভাগ্যের বাইরে কিছু পাবে না। (সুনান ইবনে মাজাহ: ৪১০৫)
হজরত আবু দারদা (রা.)-এর দোয়া
হজরত আবু দারদা (রাঃ) দোয়ায় বলতেন,
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই এমন হৃদয় থেকে, যা বিভ্রান্ত ও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। (আল-মুসান্নাফ, ইবনে আবী শায়বা: ৩৫৮৯২)
তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, যে হৃদয় দুনিয়ার সম্পদ ও চিন্তায় বিভক্ত, সেটাই ধ্বংসের পথ। আমাদের হৃদয় কেবল এক দিকেই নিবিষ্ট হওয়া উচিত—আখেরাতের চিন্তায়।
]]>