সাত দেশের রাষ্ট্রদূতের মন জয় করা মিষ্টি এখনও পরিবেশন করা হয় কলাপাতায়

৪ সপ্তাহ আগে
বাংলার ঘরে ঘরে মিষ্টি শুধু খাবার নয়, এটি এক ঐতিহ্য, এক আবেগের নাম। এই আবেগ আর ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে আজও আপন মহিমায় টিকে আছে খুলনার বিখ্যাত মিষ্টির দোকান ‘ইন্দ্রমোহন সুইটস’।

দীর্ঘ ১৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই স্বাদ, একই পরিবেশনা আর একই যত্নে তৈরি হচ্ছে এই দোকানের রসগোল্লা, পানতুয়া, সন্দেশ, চমচম ও দানাদার— যার স্বাদ ভুলতে পারেননি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশি অতিথিরাও।


জানা গেছে, ১৮৯০ সালে ভৈরব নদের কোলঘেঁষে ছোট্ট এক দোকানে যাত্রা শুরু করেছিলেন ইন্দ্রমোহন দে। সেই শুরু থেকেই মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহার হতো গরুর খাঁটি দুধ থেকে তৈরি ছানা। এখনো প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ কেজি দুধের ছানা, যার থেকে তৈরি হয় পাঁচ ধরনের মিষ্টি।


প্রতিষ্ঠাতা ইন্দ্রমোহন দে নিজের হাতে তৈরি করতেন রসগোল্লা, পানতুয়া, সন্দেশ, চমচম ও দানাদার। তার দেখানো পথে হেঁটেছেন ছেলে বেণীমাধব দে এবং এখন দোকানটির হাল ধরেছেন সঞ্জয় দে। তার অধীনে চলছে সেই পুরনো নিয়মেই মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া—অবিকল একইভাবে, কোনো রকম শর্টকাট ছাড়াই।


দোকানের প্রধান কারিগর কমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘৪৫ বছর ধরে এই দোকানে কাজ করছি। আমরা আজও আটা বা সুজি ব্যবহার করি না। খাঁটি দুধ, সামান্য ময়দা আর নিখাদ ভালোবাসা দিয়েই বানাই প্রতিটি মিষ্টি।’


দোকানের সবচেয়ে আলাদা বিষয়— এখানে এখনও মিষ্টি পরিবেশন করা হয় কলাপাতায়। নেই প্লাস্টিক বা চামচ। খেতে হয় হাতে, ঠিক আগের দিনের মতোই।


আরও পড়ুন: জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেলো মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীর


২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এই দোকানে এসেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ও তাঁর স্ত্রী। খেয়ে এতটাই মুগ্ধ হন যে সঙ্গে করে মিষ্টিও কিনে নিয়ে যান। শুধু তিনি নন, এরইমধ্যেই সাত দেশের রাষ্ট্রদূত এই দোকানের মিষ্টি চেখে গেছেন।


মজার বিষয় হলো, এখানে প্রতিদিন যতটুকু মিষ্টি তৈরি হয়, সবই সেই দিনেই বিক্রি হয়ে যায়। মিষ্টি তৈরি হয় দোকানের ভেতরেই, ক্রেতাদের চোখের সামনেই।


দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ভিড় লেগে আছে। অনেকে এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে।


বাগেরহাটের শ্যামনগর থেকে আসা হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনায় আসছি, ইন্দ্রমোহনের মিষ্টি না খেলে হয়? এমন নরম রসগোল্লা আগে খাইনি!’


খালিশপুরের বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, ‘১৩৫ বছরের পুরনো দোকানের মিষ্টির স্বাদে আজও কোনো পরিবর্তন নেই। কলাপাতায় পরিবেশনের ঐতিহ্যটা ধরে রাখাই সবচেয়ে ভালো লেগেছে।’


২০১৯ সালে দোকানটি স্থানান্তর হয় খুলনার বড় বাজারের ১৭ নম্বর হেলাতলা রোডের নিচতলায়, পুরনো ১০ নম্বর বাড়ির পাশে। তবে অবস্থান বদলালেও স্বাদ, রীতি ও ঐতিহ্যে এতটুকু পরিবর্তন হয়নি।


আরও পড়ুন: বিদেশি জাতের আম চাষে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খাগড়াছড়ি


কমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমরা কখনো বেশি পরিমাণে মিষ্টি তৈরি করিনি। যে পরিমাণে শুরু হয়েছিল, আজও সেই অনুপাতে তৈরি করি, যাতে গুণগত মান ঠিক থাকে।’


এক শতকের বেশি সময় ধরে মিষ্টিপ্রেমীদের মন জয় করে চলেছে খুলনার ‘ইন্দ্রমোহন সুইটস’—যেখানে শুধু মিষ্টি নয়, জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, ইতিহাস আর ভালোবাসার গল্প।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন