সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দিলেন বাউফলের ইউএনও

২ সপ্তাহ আগে
দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির বাউফল উপজেলা সভাপতি ও কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেল ও খবরপত্রের বাউফল প্রতিনিধি এইচ এম বাবলুকে জেলে ভরে শাস্তির হুমকি দিলেন বাউফলের ইউএনও আমিনুল ইসলাম।

সোমবার (১৯ মে) বাউফল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসে তিনি এ হুমকি দেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি কারো ফোন ধরতে বাধ্য না। আমাকে চিঠি দিতে হবে। আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে মালিককে জেলে ভরে শাস্তি দিতে পারি।’ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউএনও আমিনুল ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ আচরণে উপস্থিত সবাই হতবিহ্বল।


সোমবার ওই বিদ্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির আয়োজন ও বাস্তবায়নে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডের দিনক্ষণ ধার্য ছিল।


ওই কমিটির সভাপতি ও ভুক্তভোগী কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বৃহস্পতিবার (১৫ মে) তার কার্যালয়ে প্রথম যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি অফিসে ছিলেন না। এরপর শনিবার (১৭ মে) ও রোববার (১৮ মে) একইভাবে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রতিরোধ কমিটির তার কার্যালয়ে গেলে তখনও তাকে পাওয়া যায়নি। ওই তিনদিনই কমিটির সভাপতি তাকে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সর্বশেষ রোববার সন্ধ্যার পর তাকে ফোন দিলে তিনি ফোন কেটে দেন।


এদিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম তাকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সোমবার অনুষ্ঠানস্থলে চলে আসেন। এসেই চটে যান।  
সোমবার বেলা ১২টার সময় বিতর্ক প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে অংশ নিতে ওই বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় তাঁকে আমন্ত্রণ না দেয়ার কৈফিয়ত তলব করেন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতির কাছে।


তার প্রশ্নে জবাবে সভাপতি বলেন, আপনাকে একাধিকবার কার্যালয়ে গিয়ে পাইনি। এমনকি আপনাকে তিনদিন বিভিন্ন সময় ফোন করেছি আপনি রিসিভ করেননি। এতে হঠাৎ করে ইউএনও উত্তেজিত হন। এ সময় তিনি আরও বলেন, 'আপনারা একটা অ্যারেঞ্জমেন্ট করতেছেন ইউএনও জানে না, আপনারা কীসের অ্যারেঞ্জমেন্ট করতেছেন, আশ্চর্য ব্যাপার। ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে।'


আরও পড়ুন: পিরোজপুরে ইউএনওর বদলি ঠেকাতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন


এ সময় সভাপতি সোহেল বলেন, 'আপনাকে আমন্ত্রণের জন্য আপনার কমপ্লেক্সে তিনদিন যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনাকে পাইনি।' জবাবে ইউএনও বলেন, 'উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? কমপ্লেক্সে তো কাউয়া বক থাকে। আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলো একটা অফিস।'


এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল বলেন, 'আপনার বাংলোতে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না। এর জবাবে ইউএনও বলেন, 'বাংলোতে যখন অ্যালাউ করব তখন ঢুকবেন।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরব কেন?’


এ সময় সভাপতি সোহেল বলেন, 'আপনি ফোনই ধরলেন না, তাহলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোনো কাজ বুঝলেন কীভাবে? আপনি একজন কৃষকের ফোনও ধরতেও বাধ্য।' এরপর ইউএনও আমিনুল আবার বলেন, 'আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।' তখন সভাপতি সোহেল বলেন, 'ক্ষমতা আছে আপনি দেন শাস্তি।'


এ সময় ইউএনও খবরপত্রের সাংবাদিক এইচ বাবলুকে  তার পিয়ন দিয়ে ভয়ভীতিও দেখান। ওই সাংবাদিককে দেখা করে সরি বলতে চাপ প্রয়োগ করেন ইউএনওর গাড়ি চালক।


এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, ‘আমার কাছে এ ব্যাপারে কোন তথ্য এখনও আসেনি। তথ্য পেলে মন্তব্য করতে পারব।’
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন