বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করে শাপলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি এবং জগন্নাথপুর কোল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্যরা। উভয়পক্ষের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা।
শাপলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অভিযোগ, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান এবং খোকসা সরকারি কলেজের প্রফেসর সুলতান মাহমদ স্থানীয় সাবেক এমপির ডিও লেটার প্রদানের মাধ্যমে কোলের লাইসেন্স ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা প্রকৃত কার্ডধারী জেলেদের বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু লোক দিয়ে কোল ভোগদখল করেছে। এবার এই সিন্ডিকেট ভেঙে শাপলা সমিতিকে লাইসেন্স দেয়ার দাবি জানান তারা।
আর অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথপুর কোল সমবায় সমিতির সদস্যরা বলছেন, তাদের সমিতিতে প্রায় ৫০ জন নিবন্ধিত এবং দুই শতাধিক অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে। প্রতিপক্ষরা বাইরের এলাকার জেলে এনে কোল দখল করতে চাই। তারা যাচাই বাছাই করে প্রকৃত কার্ডধারী জেলে সমিতির জেলেদের লাইসেন্স দেয়ার দাবি জানান।
আরও পড়ুন: করোনা পরীক্ষা: কুষ্টিয়ার একমাত্র পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরি
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কার্যালয় ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা নদী ঘেঁষে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন। জগন্নাথপুর এলাকায় প্রায় ৯০ হেক্টর সরকারি উন্মুক্ত জলাশয় রয়েছে। সেখানে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ হাজার কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকার বেশি। জেলা প্রশাসন এক বছরের জন্য প্রতিবার নির্দিষ্ট হারে যেকোনো একটি নিবন্ধিত জেলে সমিতিতে ডিসিআর প্রদান করে থাকেন। ২০১২ সাল থেকে কোলের লাইসেন্স পেয়ে আসছেন জগন্নাথপুর কোল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। গেল অর্থবছর ভ্যাটসহ প্রায় এক লাখ ৭১ হাজার টাকায় লাইসেন্স প্রদান করে প্রশাসন।
আরও জানা গেছে, প্রতি অর্থবছর ৩১ চৈত্র লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় এবং বৈশাখ মাসের মধ্যেই নতুন করে লাইসেন্স প্রদান করে প্রশাসন। তবে এ বছর দুই সমিতির ঠেলাঠেলিতে চলতি অর্থবছরের জন্য লাইসেন্স দিতে পারেনি প্রশাসন। কোলের লাইসেন্স নিয়ে দুই সমিতির সদস্যের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শাপলা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির অন্তত ৩০ জন সদস্য ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করে তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা বলছেন।
এ সময় শাপলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান এবং সুলতান প্রফেসর স্থানীয় এমপির ডিও লেটারের মাধ্যমে কোলের লাইসেন্স ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা প্রকৃত কার্ডধারী জেলেদের বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু লোক দিয়ে কোল ভোগদখল করেছে। প্রকৃত জেলেদের পানিও ছুঁতে দেয়নি। এবার এই সিন্ডিকেট ভেঙে শাপলা সমিতিকে লাইসেন্স প্রদানের দাবি জানান তিনি।
আরও দেখা যায়, দুপুরে ২ টা ৮ মিনিটের দিকে জগন্নাথপুর কোল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অন্তত ৫০ জন সদস্য ইউএনওর কাছে কোলের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেন।
এ সময় এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আফিল উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, ‘আমাদের সমিতিতে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৫০ জন। অনিবন্ধিত জেলের সংখ্যা দুই শতাধিক। এই কোলের মাছ ধরেই আমাদের জীবন - সংসার চলে। কোল না থাকলে সগ্গলে না খেয়ে মরবেনে। প্রতিপক্ষের সমিতিতে প্রকৃত জেলে কম। বাইরের জেলে এনে কমিটি করেছেন তারা।’ প্রকৃত জেলে যাচাই বাছাই করে লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ!
গেল বছর কত টাকায় লাইসেন্স নেওয়া হয়েছিল? কত টাকা আয় ব্যয় হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা অশিক্ষিত। হিসাব নিকাশ সুলতান প্রফেসর করে।’
খোকসা সরকারি কলেজের প্রফেসর সুলতান মাহমুদ অভিযোগ অস্বীকার বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে জগন্নাথপুর কোল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বৈধভাবে লাইসেন্স নিয়ে আসছে। গতবছর এক লাখ ৩৭ হাজার টাকায় (২৫ % ভ্যাটবাদে) এক বছরের জন্য লাইসেন্স নেওয়া হয়েছিল। প্রাকৃতিক মাছের পাশাপাশি অন্তত ১০ লাখ টাকা কার্প জাতীয় মাছ ছাড়া হয়েছিল। তবে তিনি আয় - বয়ের প্রকৃত হিসাব বলেননি। তার ভাষ্য, তিনি সমিতির কেউ নন। শুধু জেলেদের হিসেব সংরক্ষণে সহযোগীতা করেন। উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, জগন্নাথপুর কোলের আয়তন প্রায় ৯০ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৫০০ কেজি মাছ উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা (প্রতিকেজি ৫০০ টাকা দরে)।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘উভয়পক্ষই কার্যালয়ে এসে অভিযোগ এবং সুবিধা -অসুবিধার কথা জানিয়েছেন। তদন্ত সাপক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’