সময়ে সংবাদের পর সুনামগঞ্জের সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি

৪ দিন আগে
সময় সংবাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে রাতের অন্ধকারে সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও লুটপাটের চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন প্রচারের মাত্র এক দিন পরই প্রাথমিক তদন্তে এই বালু চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় ও অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় সদর মডেল থানার এসআই (সেকেন্ড অফিসার) জহির হোসেনকে বদলি করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদের স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে, এসআই জহির হোসেনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে থানা থেকে ছাড়পত্র নিয়ে শাল্লা থানায় যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই আদেশে শাল্লা থানার পুলিশ কর্মকর্তা আল আমিনকে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় বদলি করা হয়েছে।

 

এর আগে গত ১২ জুন সময় সংবাদের ওয়েব পোর্টালে ‘তিনি দিনে পুলিশ, রাতে বালু লুটকারি চক্রের ত্রাণকর্তা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়, এ প্রতিবেদনে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে পুলিশ কর্মকর্তা জহির হোসেনের (নদী তীরের গ্রামবাসীদের জানামতে নাম -জহিরুল ইসলাম) গভীর রাতে সাদা পোশাকে ধোপাজান নদীতে গোপনে প্রবেশ ও অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্রকে অর্থের বিনিময়ে সহযোগিতার ব্যাপারে গ্রামবাসীদের বিস্তর অভিযোগ উঠে আসে।

 

আরও পড়ুন: তিনি দিনে পুলিশ, রাতে বালু লুটপাট চক্রের ‘ত্রাণকর্তা’

 

সংবাদে উল্লেখ করা হয়- সরকারের খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনসহ পুলিশ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ধোপাজান নদীতে অবৈধ উপায়ে বালু লুটপাট বন্ধে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০২০ সালের শেষের দিকে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি ও দুই তীরের গ্রামের পর গ্রাম ভাঙনের মুখে পরায় নদীর বালু মহাল বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে সরকার পতনের পর ব্যাপক লুটপাটে জড়িত চক্রকে সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়ায় সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি নাজমুল হক, ওসি (তদন্ত) ওয়ালী আশরাফ, ডিবি ওসিসহ কমপক্ষে ১০ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের বদলির পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ সদর দফতর।

 

কিছুদিন পর ধোপাজানে লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকাসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসায় বদলি করা হয় তৎকালীন পুলিশ সুপার আফম আনোয়ার হোসেন খানকেও। এ অবস্থার পর কয়েক মাস লুটপাট বন্ধ থাকলেও আবারও দুঃসাহস দেখিয়ে এই নদী পথে এমন অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগ উঠে পুলিশ কর্মকর্তা জহিরের বিরুদ্ধে। ঈদুল আজহার আগের রাতে তিনি ছুটিতে থাকলেও রাতের অন্ধকারে ধোপাজান নদী থেকে ১০০টি নৌকায় করে বালু লুটের ঘটনার পরিকল্পনার সঙ্গে এসআই জহির জড়িত ছিলেন বলে বিস্তর অভিযোগ উঠে আসে নৌ শ্রমিকদের কাছ থেকে।

 

প্রতি নৌকা থেকে ৫-১০ হাজার করে টাকা উত্তোলন করা হয় চারজন ব্যক্তিকে দিয়ে। তারা জানান, এই টাকা পুলিশ পাবে। টাকা উত্তোলন করা ৪ ব্যক্তির একজন সময় সংবাদকে নিশ্চিত করে বলেন, ধোপাজান নদী থেকে অবৈধ উপায়ে বালুবাহী নৌকা বের করতে হলে পুলিশ কর্মকর্তা জহিরের সঙ্গে আগে আলোচনা করা ও নির্ধারিত টাকা দেয়ার কথিত নিয়ম রয়েছে।

 

আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বালু উত্তোলন: ‘শর্ষের মধ্যেই ভূত’ বললেন স্থানীয়রা

 

যদিও পুরো ব্যাপারটি অস্বীকার করেছিলেন এসআই জহির, তার দাবি সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। তবে সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদের নির্দেশে তদন্ত শুরু হলে ঘটনার কিছু বিষয়ের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা জহিরকে ১৪ জুনের মধ্যেই থানা থেকে ছাড়পত্র নিয়ে শাল্লা থানায় বদলির আদেশ দেয়া হয়।

 

অন্যদিকে, শাল্লা থানা থেকে আল আমিন নামের অপর এক পুলিশ কর্মকর্তাকে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় যোগ দিতে আদেশ দেয়া হয়েছে।

 

জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা এসআই জহির হোসেনকে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের বার বার সতর্কবার্তা থাকার পরেও তিনি দায়িত্বে অবহেলার পাশাপাশি ধোপাজান নদীপথে অপরাধে জড়িত হওয়ার মতো অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। যা অপরাধ কমাতে দিন রাত জেলা পুলিশের নিরলস ও সমন্বিত পরিশ্রমের বিপরীত কর্মকাণ্ড।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন