সমুদ্রসৈকত থেকে সংগ্রহ হবে ১০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক

২ দিন আগে
প্লাস্টিক দূষণ রোধে কক্সবাজার সৈকত থেকে সংগ্রহ করা হবে ১০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক। সচেতন করা হবে ১০ লাখ পর্যটককে, যার মধ্যে ১ লাখ থাকবে সরাসরি সম্পৃক্ত। প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাদ্য পাবে স্থানীয় ১০ হাজার পরিবার। ছয় মাসব্যাপী এই উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে পর্যটক, স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসন।

কক্সবাজারের অপরূপ সৌন্দর্য আর বিস্তৃত সমুদ্রসৈকত শুধু দেশেরই নয়, বিশ্ব পর্যটকদের কাছেও এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। তবে সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আজ হুমকির মুখে, প্লাস্টিক দূষণের কারণে। সেই দূষণ ঠেকাতেই এবার কক্সবাজারে শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী বড় উদ্যোগ।


কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ছয় মাসের এ কর্মসূচিতে সংগ্রহ করা হবে ১০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক। 


রোববার দুপুরে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম, পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন: ৩৪ বছরেও হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ, কুতুবদিয়াবাসীর কান্না

পরে স্থানীয়রা প্লাস্টিক জমা দিয়ে সংগ্রহ করেন চাল, ডাল, ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এতে দারুণ খুশি স্থানীয়রা।


শহরের সমিতির পাড়ার বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, এদিকে যেমন সমুদ্রসৈকত প্লাস্টিক মুক্ত হচ্ছে। অন্যদিকে এসব প্লাস্টিক জমা দিয়ে চাল, ডাল, ডিমসহ অনেক কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য খুবই উপকার হলো।


কলাতলী এলাকার বাসিন্দা আয়েশা বেগম বলেন, ‘প্লাস্টিক জমা দিয়ে ৩ টাকা পেয়েছি। এসব দিয়ে ডিম, বিস্কুট ও চিনি কিনেছি। অল্প টাকায় অনেক কিছু পেয়েছি। খুবই ভাল লাগছে।’


এদিকে পর্যটকদের জন্যও রয়েছে উপহার। তিনটি ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’-এ জমা দিলেই মিলছে নানা উপহার। যেখানে ১ লাখ পর্যটককে প্লাস্টিক প্রতিরোধে করা হবে সরাসরি সম্পৃক্ত আর প্রদর্শনীর মাধ্যমে সচেতন করা হবে ১০ লাখ পর্যটককে। প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা ছড়াতে হবে বলছেন আয়োজকরা।


বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের  নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের অস্তিত্বের হুমকি হচ্ছে প্লাস্টিক। যে কোনো সমস্যা সমাধানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নদীমাতৃক এই দেশের প্রাণপ্রবাহ বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণে বিপন্ন প্রাণীকুলকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। এ পৃথিবীকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য রাখতে হলে সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।’


আর প্রশাসন জানিয়েছে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত।

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে অবরোধ প্রত্যাহার, কক্সবাজার-ঢাকা ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘প্লাস্টিক এখন এক নম্বর শত্রু। এই শত্রুকে মোকাবিলার জন্য সবাইকে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা উচিত। তাই কক্সবাজারে আসা পযটকদের সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে, জনগণকে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতন করতে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে প্লাস্টিক রিসাইকেলকে জনপ্রিয় করতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এবছর ৬ মাসব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ করমসূচি হাতে নিয়েছি। যার মাধ্যমে কক্সবাজারের ৫০ টি স্পটে ৫০ টি ইভেন্টের মাধ্যমে ১০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক রিসাইকেল করা হবে। স্থানীয় ১০ হাজার প্রান্তিক পরিবার প্লাস্টিকের বিনিময়ে চাল ডাল পাবে এবং লাখ লাখ পর্যটক এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণের ব্যাপারে সচেতন হবে।’


এর আগে ২০২৪ সালে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল ৮৩ মেট্রিক টন প্লাস্টিক। আর ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক দিয়ে পর্যটকদের সচেতন করতে সমুদ্রসৈকতের সীগাল পয়েন্টের বালিয়াড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে ৬২ ফুট উচ্চতার প্লাস্টিক দানব।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন