সমুদ্র উত্তাল, তবুও লাখো পর্যটকের ভিড়

১ সপ্তাহে আগে
টানা ছুটি আর উৎসবের আমেজে লাখো পর্যটকের পদচারণায় সরব হয়ে উঠেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। দুর্গাপূজা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিকে কেন্দ্র করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে সৈকত শহরটি।

প্রকৃতির বৈরী আচরণ, মেঘলা আকাশ, টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া কোনোটিই থামাতে পারেনি পর্যটকদের আনন্দ-উল্লাস। উত্তাল সাগরের মাঝেও সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে দেখা যাচ্ছে উপচে পড়া ভিড়। বালিয়াড়ি, বিচ বাইক, ঘোড়ার গাড়ি সবখানে ছড়িয়ে আছে উৎসবের আমেজ।


সাভার থেকে আসা পর্যটক ইতি রহমান বলেন, সবকিছুই খুব ভালো লাগছে। পরিবারের সাথে এসেছি এবং আজকের আবহাওয়া চমৎকার। বৃষ্টির মাঝে সমুদ্রের সৌন্দর্য এক অনন্য অনুভূতি দিচ্ছে।


কুমিল্লা থেকে আগত সোয়েব মাহমুদ বলেন, পূজার ছুটিতে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে এসেছি। কক্সবাজারে এলেই এক আলাদা ভালো লাগা কাজ করে, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আবহাওয়া দারুণ, সমুদ্র পাড়ে অনেক ভিড়, বিচ বাইক, ঘোড়া সব মিলিয়ে খুব আনন্দময় সময় কাটাচ্ছি।


রোকসানা আক্তার জানান, সারা বছর পড়াশোনার চাপ থাকে, তাই পূজার ছুটিতে একটু অবসর কাটাতে স্বামীর সাথে কক্সবাজার এসেছি। অনেক ভালো লাগছে। দুই দিন হলো এসেছি, কাল শরীয়তপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হবো। এই দু’দিন যেন অনেক দিনের মতো মনে হচ্ছে। ইচ্ছে ছিল আরও কিছুদিন থাকি।


তবে এই উৎসবের মাঝেও রয়েছে কিছুটা শঙ্কা। পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এতে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সৈকতে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা।


আরও পড়ুন: নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন পর্যটকরা


নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার এবং দমকা হাওয়ার গতি ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকলেও পর্যটকদের অনেককেই সমুদ্রে নামতে দেখা গেছে।


এ অবস্থায় জীবন রক্ষাকারী সেবার গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ। যদিও তহবিল সংকটের কারণে ১ অক্টোবর থেকে সী সেফ-এর লাইফগার্ড কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কথা ছিল, শেষ মুহূর্তে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা চালু রাখা হয়েছে।


ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক হুমায়ুন কবির বলেন, যেকোনো উৎসব বা বিশেষ উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যায়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় পর্যটকদের। যেখানে অন্তত শতাধিক লাইফগার্ড থাকা প্রয়োজন, সেখানে বর্তমানে মাত্র ২৭ জন কর্মরত আছেন। এই সংকট পর্যটকদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।


আরেক পর্যটক মোবারক আহমেদ বলেন, লাইফগার্ড ছাড়া সমুদ্র সৈকতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব। আমরা অতীতে বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছি, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। এই প্রেক্ষাপটে লাইফগার্ডদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য। আমাদের প্রত্যাশা, কেবল লাইফগার্ড নয়-পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দিকেই যথাযথ নজর দেয়া হবে।


আরও পড়ুন: আপাতত বন্ধ হচ্ছে না কক্সবাজার সৈকতের লাইফগার্ড সেবা


সী সেফ লাইফগার্ড সংস্থার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, টানা ছুটির ফলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে পর্যটকের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। লাখো পর্যটকের আগমনে সৈকতজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র এখন কিছুটা উত্তাল। এ অবস্থায় আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে বিপজ্জনক পয়েন্টগুলোতে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবুও অনেক পর্যটক নিষেধ অমান্য করে সাগরে নেমে পড়ছেন। এ কারণে, সম্ভাব্য দুর্ঘটনা মোকাবেলায় আমরা ওইসব পয়েন্টের আশপাশে প্রয়োজনীয় উদ্ধার সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছি এবং উদ্ধার কার্যক্রমও চালু রয়েছে।


তিনি আরও বলেন, পহেলা অক্টোবর থেকে লাইফগার্ড সেবা বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও, আমাদের নির্বাহী পরিচালক মহোদয়ের নির্দেশে সেটি আপাতত চালু রাখা হয়েছে। আমরা আশা করছি, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কোনো বিকল্প দাতা দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত এই সেবাটি অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে আমাদের দাতা প্রতিষ্ঠান আরএনএলআই’র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে এবং আমরা সিআইপিআরবি’র অন্যান্য সম্ভাব্য দাতাদের সাথেও আলোচনায় রয়েছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো- যতদিন সম্ভব, পর্যটকদের জন্য এই সেবাটি চালু রাখা।


পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা ছুটির কারণে কক্সবাজারে ভিড় করেছে লাখো পর্যটক। তাদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়াও সক্রিয় রয়েছে সী সেফ-এর ২৭ সদস্যের একটি লাইফগার্ড দল।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন