সবাইকে পরখ করতে গিয়েই কি বড় হার দেখল বাংলাদেশ?

১ দিন আগে
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম দুটি ম্যাচই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজ নিশ্চিতের পর শেষ ম্যাচে খানিকটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে চেয়েছিল টাইগাররা। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন লিটন দাস। আর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণেই হয়তো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার সহজ সুযোগ হারিয়েছে লিটন দাসের দল। তবে হোয়াইটওয়াশ না করতে পারলেও জয়ে সিরিজ শেষ করে স্বস্তির ঢেকুর তুলছেন টাইগার অধিনায়ক।

পুরো সিরিজেই পাকিস্তানের ব্যাটারদের নাকানিচুবানি খাইয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ ম্যাচে তাকে বিশ্রাম দেয়া হয়। সিরিজে নতুন বলে বেশ সফল তানজিম সাকিবের বদলে এই ম্যাচে ফেরেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দারুণ ফর্মে থাকা পারভেজ হোসেন ইমনকেও দেয়া হয় বিশ্রাম। তার বদলে দলে আসা শেখ নাঈমের পারফরম্যান্স তো বড় ধরনের ব্যবধানই গড়ে দিয়েছেন। বিশ্রাম দেয়া হয় রিশাদ হোসেনকে আর জ্বরের কারণে ছিলেন না তাওহীদ হৃদয়।

 

পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে একাদশে ছিল পাঁচ পরিবর্তন। এক কথায়, পুরো একাদশই বদলে ফেলে টিম ম্যানেজমেন্ট। আগের ম্যাচে জায়গা না পাওয়া স্কোয়াডের বাকি পাঁচজনকেই এই ম্যাচে একাদশে রাখা হয়। উদ্দেশ্য, বেঞ্চের শক্তি পরীক্ষা। তবে সেই শক্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে বেশ ভালোভাবেই ধরাসায়ী হয়েছে বাংলাদেশ।

 

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তানকে কোনোরকম পাত্তা না দেয়া বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে ৭৪ রানের ব্যবধানে হেরেছে। ১৭৯ রানের জবাব দিতে নেমে টাইগাররা অলআউট হয়েছে ১০৪ রানে। স্কোর দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ব্যাটিংয়ে কেমন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল টাইগাররা। আর বোলিংয়েও ছিল না গত ২ ম্যাচের ধারাবাহিকতা।

 

আরও পড়ুন: তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ

 

এমন হারের পর স্বাভাবিকভাবেই সংবাদ সম্মেলনে উঠে এসেছে একাদশে রদবদলের বিষয়টি। লিটনের জবাব, 

খেলোয়াড়দের রোটেট করে খেলানো এবং পরখ করে দেখার জন্যই এমন পরিবর্তন। লিটন এবং ম্যানেজমেন্টের সেই বাজিয়ে দেখার পরিকল্পনা যে কাজে আসেনি সেটা স্পষ্ট। তবে এই ম্যাচে হার নিয়ে কিছুটা হতাশা থাকলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টি–টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আনন্দ ছিল অধিনায়কের কণ্ঠে।

 

সিরিজ জয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শুরুতেই বোলারদেদ প্রসঙ্গে আনেন লিটন। তিনি বলেন, ‘এই সিরিজ জয়ে বোলারদের ভূমিকা অনেক বেশি ছিল। প্রথম ম্যাচে তাদের ১১০ রানে অল আউট করা, দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৫ রান ডিফেন্ড করা। এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।’

 

বোলারদের এই ফর্মের কারণেই তাদের নিয়ে বেশি সিরিয়াস টিম ম্যানেজমেন্ট। আর সেই কারণেই পরিকল্পনা রোটেশন করে খেলানোর। এ বিষয়ে লিটনের মতামত, ‘তাসকিন অনেক দিন পর ক্রিকেটে ব্যাক করেছে। সে টানা খেলতে থাকলে ইঞ্জুরড হওয়ার চান্স বেশি থাকে। শরিফুল ইসলামও সেইম। বুঝতে হবে কোন প্লেয়ারকে কতটুকু ম্যাচ খেলানো যাবে। আমাদের হাতে কিন্তু যারা আছে তারা বাংলাদেশের সেরা ২-৩ জন পেসার। তাদেরকে যদি হারিয়ে ফেলি কোনো কারণে যে স্বপ্নটা বা যে আশাটা আমরা নিয়ে আগাচ্ছি সেখানে পৌঁছাতে পারব না। প্রত্যেক প্লেয়ারের খেলার সুযোগ দেয়া এবং স্বাস্থ্যের ব্যাপারও দেখা দরকার।’

 

দলে একাধিক পরিবর্তনের একটা বড় কারণ ছিল বদলি খেলোয়াড় তৈরি করা। এটা স্পষ্ট যে মেগা টুর্নামেন্টের জন্য দল অনেকটা সাজিয়ে ফেলেছে ম্যানেজমেন্ট। এখন যদি কেউ চোটে পড়ে যান, সেক্ষেত্রে বিকল্প কে হবে, সেজন্যই এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিষয়টি আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন অধিনায়ক লিটন।

 

লিটন বলেন, ‘আমার বিশ্বাস তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী অনিক, শামীম হোসেন পাটোয়ারী এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বেস্ট মিডল অর্ডার। হৃদয় জ্বর না থাকলে আজকে খেলতে পারত। ভিন্ন কিছু হতে পারত। বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করলে কেউ যদি ইঞ্জুরড হয়ে যায়, সেখানে মেকাপ করতে হলে আমাদের মাথায় আছে আমরা দেখব।’

 

আরও পড়ুন: সাকিবকে পেছনে ফেলে দেড়শর ক্লাবে সোধি

 

মিরপুরের পিচ নিয়ে অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আলি আগা। তার মতে, 

এই পিচ মেগা টুর্নামেন্টের প্রস্তুতির জন্য একদমই আদর্শ উইকেট নয়। তবে বাংলাদেশের অধিনায়ক এই মতামত একদমই উড়িয়ে দিয়েছেন। এই সিরিজের উইকেট বিশেষ করে শেষ ম্যাচের উইকেট বিশ্বকাপ কিংবা এশিয়া কাপের প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন টাইগার অধিনায়ক।

 

লিটন বলেন, ‘এটা (শেষ ম্যাচের উইকেট) ভালো উইকেট ছিল। আগের দুই ম্যাচ যে খেললাম ওটার চেয়ে অনেক ভালো উইকেট ছিল। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ছিল। আমাদের বোলিং ইউনিট খুবই ভালো করেছে। অধিনায়ক হিসেবে মনে করি, ১৮০ চেইজ করার মতো ছিল। ব্যাটিং ইউনিট ক্যাল্কুলেটিভ খেলাটা খেলতে পারেনি।’

 

সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদাহরণ টেনে নিজের মন্তব্যের পেছনে যুক্তিও দাঁড় করিয়েছেন লিটন, ‘কিছু দিন আগে সেন্ট ভিনসেন্টে বিশ্বকাপ খেললাম একই ধরনের উইকেট। সিরিজ না বিশ্বকাপে। ১৩০, ১৪০ রানও বেশি ছিল। ক্রিকেটে এমন থাকবে কিছু কিছু দিন। প্লেয়ার হিসেবে আমাদের মানিয়ে নিয়ে খেলাটাই কাজ। প্রথম দুই ম্যাচে আমরা পেরেছি, তারা পারেনি। আজকে আমরা পারিনি তারা ভালো খেলেছে।’

 

যেকোনো টুর্নামেন্টের উইকেট এমন হলে এই সিরিজের অভিজ্ঞতা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগবে বলে মনে করেন টাইগার অধিনায়ক, ‘এভাবে এমন উইকেটে খেলে গেলে এটা অবশ্যই সাহায্য করবে। অবশ্যই সাহায্য করবে। ব্যাটিং বোলিং দুই জায়গাতেই সাহায্য করবে বলে মনে হয়।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন