সন্তান জন্মের পর প্রথমে করণীয়

১ সপ্তাহে আগে
একজন মুসলমানের ঘরে সন্তান জন্মের পর ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে, যা নবজাতকের জন্য কল্যাণকর এবং অভিভাবকের জন্য একটি আমানতের দায়িত্ব পালন হিসেবেও গণ্য হয়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলো।

আজান ও ইকামত দেয়া

 

নবজাতকের ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া মুস্তাহাব। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

مَنْ وُلِدَ لَهُ مَوْلُودٌ، فَأَذَّنَ فِي أُذُنِهِ الْيُمْنَى، وَأَقَامَ فِي أُذُنِهِ الْيُسْرَى، لَمْ تَضُرَّهُ أُمُّ الصِّبْيَانِ নবজাতকের ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দিলে শিশুটিকে উম্মু সিবইয়ান (শয়তান ও জ্বিন প্রভাব) ক্ষতি করতে পারবে না। (ইমাম আবু ইয়ালা তার মুসনদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন:৬৭৮০)


 

তাহনিক (মিষ্টি বা খেজুর চোষানো) করা

 

শিশুর মুখে খেজুর চোষানোর মাধ্যমে তাহনিক করা সুন্নাত। كان رسول الله ﷺ يُؤْتَى بالصبيان فيُبرِّك عليهم ويحنكهم بالتمر রসলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে নবজাতকদের এনে দেওয়া হতো, তিনি তাদের জন্য বরকতের দুআ করতেন এবং খেজুর দিয়ে তাহনিক করতেন। (সহিহ বুখারি:৫৪৭০)


নাম রাখা

 

সন্তানের উত্তম নাম রাখা সুন্নত এবং এটি পিতার অন্যতম দায়িত্ব। إِنَّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ، فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম ও পিতার নামে ডাকা হবে, অতএব তোমরা উত্তম নাম রাখো।( সুনানু আবি দাউদ:৪৯৪৮) নাম রাখার সময়: জন্মের পর প্রথম দিন বা সপ্তম দিনে।

 

আরও পড়ুন: স্ত্রীর ভরণপোষণ দেনমোহরের অর্থ থেকে করা যাবে?

 

আকিকা করা (সপ্তম দিনে)

 

আকিকা অর্থ: সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা। كُلُّ غُلَامٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ، تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ، وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ، وَيُسَمَّى প্রতিটি শিশু তার আকিকার দ্বারা বন্ধক রাখা হয়। সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবাই করা হয়, মাথা মুন্ডন করা হয় এবং নাম রাখা হয়। ছেলের জন্য: দুইটি ছাগল/ভেড়া মেয়ের জন্য: একটি ছাগল/ভেড়া (তিরমিজি: ১৫২২)


মাথা মুন্ডন করা ও চুলের ওজন সম পরিমাণ রূপা সদকাহ করা

 

ফাতিমা রা. হাসান ও হুসাইনের মাথার চুল মুন্ডন করে রুপার সমমূল্য সদকা করেছিলেন। (ইমাম মালেক, মুয়াত্তা:২/৫০১)


সুন্নতে খতনা করানো

 

ছেলের খতনা করা ইসলামি সংস্কৃতির অংশ এবং এটি ফিতরাত তথা প্রকৃতি সম্মত কাজ।পাঁচটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত, তার মধ্যে একটি হলো খতনা করা। সময়: সাধারণত জন্মের পর দ্রুত করাই উত্তম, তবে শিশুর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। (সহিহ বুখারি: ৫৮৮৯)


বরকতময়  দুআ ও সদকাহ-র ব্যবস্থা

 

নবজাতকের জন্য বরকতের দুআ করা এবং তার পক্ষ থেকে সদকা করা খুবই কল্যাণকর। اللهم اجعله مباركا عليك وعلى أمة محمد হে আল্লাহ! তুমি এ শিশুকে তোমার জন্য ও মুহাম্মদের উম্মতের জন্য বরকতময় করে দাও। (মুস্তাদরাকু হাকিম:৬১৫৮)

 

সন্তানের ইসলামি শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি


সন্তান যেন ইমানদার ও নেককার হয়, এজন্য শুরু থেকেই দ্বীনি পরিবেশ ও দিকনির্দেশনা অপরিহার্য। يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারকে আগুন থেকে রক্ষা করো। (সুরা তাহরিম:৬)


নবজাতকের আগমন পরিবারে খুশি ও বরকতের বার্তা নিয়ে আসে। তাই ইসলাম তার আগমনকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে স্বাগত জানানোর শিক্ষা দেয়। উপরোক্ত প্রতিটি করণীয় মুসলিম পরিবারকে একটি দ্বীনদার প্রজন্ম গঠনের দিকে এগিয়ে দেয়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন