ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলোপ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণ এবং প্রোক্লামেশন অব জুলাই রেভ্যুলিশনের জন-আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে এ ছাত্রসমাবেশে বক্তারা একথা বলেন। শহরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘গত দেড় দশক ধরে খুনি হাসিনা আমাদের দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে। আমাদের দেশটাকে নেতৃত্ব শূন্যতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমাদের পুর্বতন যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব রয়েছে তাদের বিভাজনের কারণে তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, ঠিক সেই জায়গাতেই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে হাল ধরতে হয়েছে।’
আরও পড়ুন: শিক্ষকতাকে প্রথম শ্রেণির পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে তাগিদ হাসনাতের
তিনি বলেন, ‘আগস্টের ৬ তারিখের পর আজ পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান বিচার আমরা দেখতে পাইনি। ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় নাই। ২০১৪ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয় নাই। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে যেভাবে নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছে সেগুলির এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয় নাই।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের কাজকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, তাহলে অবশ্যই অবশ্যই এই বিচারগুলিকে সম্পন্ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা দেখি নানা বিদ্রোহ করা হয়, সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়। আপনাদের বলি- আপনারা রিয়েলিটি মাইনা নেন। যতদিন ছাত্রসমাজ জেগে আছে, ততদিন এই খুনি শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারবে না। ঢাকার মসনদে কে বসবে সেটি আগে দিল্লি থেকে নির্ধারণ করা হতো।’
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘যারা ক্ষমতার লোভে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষের রক্ত ও জীবনকে বিন্দুমাত্র মূল্য দেয় না, তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না বাংলাদেশের মানুষ। এ দেশের মানুষের জীবনের দিকে আর যদি কোনো শকুন দৃষ্টি দেয়, তাহলে তার চোখ উপড়ে ফেলব। হোক সে দেশের ভিতরের শক্তি অথবা বাইরের শক্তি। আমরা আমাদের শহীদ ভাইদের হত্যার বিচার চাই। ওই শেখ হাসিনা দেশে আসবে, তবে সে দেশে এসে সরাসরি ওই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে, এসে সরাসরি ওই কাঠগড়া থেকে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অবশ্যই একটি যৌক্তিক সময় নির্বাচন হবে। তবে তার পূর্বে এই খুনি হাসিনা আমাদের এই দেশের সিস্টেমগুলোকে যেই ধ্বংস করে দিয়েছে, সেই সিস্টেমগুলোকে সংস্কার করতে হবে।
আমাদের এই বাংলাদেশ আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা চোখে চোখ রেখে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করব। পৃথিবীর কোনো বহিঃশক্তি যদি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের চেষ্টা করে, তাহলে আমরা সেই পররাষ্ট্রনীতি ছুঁড়ে ফেলব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দিয়েছি। সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকতে হবে। এ অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। সেই ঘোষণাপত্রে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের কথা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন: ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র চান হাসনাত
কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় ছাত্র সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন সোহেল রানা। অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন হাসিব-আল ইসলাম, রিফাত রশীদ, আশরেফা, রাজেন্দ্র কলেজ শাখার প্রধান কাজী রিয়াজ, ফারহান আহসান অর্ণব, নাবিলা তালুকদার, তাহসিন হাসান দ্বীন, মাহমুদুল হাসান ওয়ালিদ, সানজিদা রহমান সমতা, জেবা তাহসিন, শাহ মো. আরাফাত প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় ফরিদপুরে বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী, সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এই সকল সশস্ত্র হামলার সাথে জড়িত অপরাধীরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখনও অনেকে আমাদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আন্দোলনে আহত অনেকে পারিবারিক কারণে থানায় মামলা করতে পারেনি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আন্দোলনের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ দেশে আর মুজিববাদ ফিরে আসবে না।’
সমাবেশ শুরুর পর মঞ্চ থেকে নেমে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের ৮ শহীদের পরিবার ও আহতদের খোঁজখবর নেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সাজিদ আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
আরও পড়ুন: আগামীর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নির্ভর করছে তাদের কূটনীতির উপর
ছাত্র সমাবেশ উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সমর্থকরা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও প্লাকার্ড নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে যোগ দেন।