সংবিধান সম্পৃক্ত বিষয়ের সংস্কার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে তা নিয়ে এখনও কাটেনি বিতর্ক। সবশেষ কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব সামনে আনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জামায়াতসহ কিছু দল এতে সায় দিলেও ভিন্ন অবস্থানে বিএনপিসহ অন্যরা।
বাম ঘরানার প্রায় সব দলই মনে করে সাংবিধানিক আদেশ নয় বরং নির্বাচিত সংসদই সংবিধান সম্পর্কিত সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি ও উপযুক্ত বিকল্প। এক্ষেত্রে সংসদকে পাশ কাটানো হবে ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর নজির, এমন সতর্কবার্তাও দিচ্ছেন বাম নেতারা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অনেকটা এটা ধরে নেয়া রাষ্ট্রপতির নামে জারি হবে এটা। এটা খুবই বিপজ্জনক এবং খুবই ভয়ঙ্কর একটা প্রস্তাবনা। সেটা এই অর্থে তাহলে ভবিষ্যত সংবিধান পরিবর্তনের জন্য মানুষের ম্যান্ডেড প্রয়োজন হবে না, প্রতিনিধ্বিত লাগবে না, পার্লামেন্ট লাগবে না। রাষ্ট্র রাজনীতির কোনো বাকে কোনো একটা পরিবর্তনের সময় রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে যে কোনো সংশোধনী তখন জারি করতে পারবেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংবিধান সংশোধন করে যেটা করতে হবে, আগামী সংসদের জন্য রেখে দিতে হবে। এটা ছাড়া উনারা নতুন করে বাস্তবায়নের এমন অনেকগুলো পদ্ধতি আনছেন, আমি দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের ঐক্যমতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সাংবিধানিক আদেশ জারির ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনা হচ্ছে পাকিস্তান আমলে সামরিক শাসক ইয়াহহিয়া খানের একই ধরনের একটি আদেশকে। কিন্তু উনসত্তরের সে প্রেক্ষাপট আর বর্তমান বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে মনে করেন বাম নেতারা।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, তখন তো প্রেসিডেন্টশিয়াল ফর গভমেন্টে ছিল, দুই নম্বর কথা হলো তখন সংবিধান স্থগিত করে তারপরে সেগুলো অর্ডার দিতে হয়েছে। এখন তো সংবিধান স্থগিত না, সেই জায়গায় সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বাস্তবে আমরা সংবিধান শূন্য অবস্থার মধ্যে নেই। নানা সমালোচনা থাকা সত্বেও সংবিধানিক পদ্ধতিতে সরকার চলছে। এমনকি ঐকমত্য কমিশন, তারা যে আলোচনা করছে সংস্কারের যে এজেন্ডা এটারও কোন ভিত্তি কিন্তু বিদ্যমান মূল সংবিধান।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, কেউ কেউ মনে করেন সুযোগ একটা পেয়েছি, এটা দিয়েই করতে হবে এটা ঠিক না। সংবিধান শপথ নিয়ে সরকার হয়েছে (অন্তর্বর্তী সরকার)। এই সরকার সংবিধানের শপথ ভায়োলেট করে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে না তো। সংকট নিরসনে গিয়ে সংকট তৈরি হয় সেটা কখনই শ্রেয় নয়। সেই কারণে বলা হচ্ছে নির্বাচন করে বৈধ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সব কিছুর সিদ্ধান্ত নেয়া হোক।

এদিকে, রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে নতুন কিছু সংযোজন করলেও বিদ্যমান চার নীতি বহাল পক্ষে সরব বেশ কয়েকটি বাম দল। এর ব্যত্যয় হলে সনদে সই করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানান নেতারা।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, যে বিষয়গুলো মৌলিক আদর্শগত বিরোধের জন্ম দিবে, সেগুলোকে বাদ দেয়াটাই সমীচীন বলে আমরা মনে করি। আর তা না হলে শুধুমাত্র আমাদের দল না অনেকগুলো দলের পক্ষে হয়ত জাতীয় সদনে স্বাক্ষর করা নাও হতে পারে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা তো সই করতে চাই, তবে এটা নির্ভর করবে যারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের ওপরে। বির্তকিত ভূমিকাতে লেখা থাকে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে, তারা যদি এমন কথা বলেন যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় তাহলে আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়াবে এই সনদে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর করার।
যেসব সংস্কারে সব দল একমত থাকবে, মোটাদাগে সেগুলোর ভিত্তিতেই সনদ তৈরির পক্ষে বামপন্থি বেশিরভাগ দল।