সংকট দেখিয়ে বেশি দামে সার বিক্রি, বিপাকে মানিকগঞ্জের চাষিরা

৩ সপ্তাহ আগে
মানিকগঞ্জে সারের সংকট দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বস্তা প্রতি ৪শ থেকে ৫শ টাকায় সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। সার না পেয়ে অনেক কৃষকই ফিরছেন খালি হাতে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের।

বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় রবি শস্য আবাদে ব্যস্ত মানিকগঞ্জের চাষিরা। রোপণ করা হচ্ছে, মুড়ি কাটা পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, আলুসহ নানা বীজ। এতে বেড়েছে সারের চাহিদা। তবে কৃষকদের অভিযোগ, সার সংকট দেখিয়ে, সরকারি মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রি করছেন ডিলাররা। ১ হাজার ৩৫০ টাকার সার বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। সার না পেয়ে অনেক কৃষককে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। আবার অতিরিক্ত দাম দিলে মিলছে সার।

 

বালিজরিগ্রামের কৃষক আরিফ জানান, ‘অতিরিক্ত টাকা না দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে না। অতিরিক্ত টাকা দিলে রাতে সার পাওয়া যাচ্ছে। ডিলাররা গোপনভাবে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সার বিতরণ করছে।’

 

আরও পড়ুন: মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে ব্যস্ত রাজবাড়ীর চাষিরা, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে সারের দাম

 

কৃষক সলিমুদ্দিন বলেন, এবার সারের কারণে চাষিরা হতাশার মধ্যে রয়েছে। সময়মতো সার পাচ্ছি না। ডিলাররা বলছে সার নেই, অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সার আনছে। এখন ভরা মৌসুম, মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগাতে হবে-এ অবস্থায় বেশি দাম দিয়ে কেনা ছাড়া আর কীইবা করা যাবে?

 

দৌলতপুর উপজেলার কৃষক শাহিন জানান, উপজেলার সংকট প্রকট, কিন্তু কেউ কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বছরের শুরুতেই যদি এমন পরিস্থিতি থাকে, তাহলে চাষাবাদ কীভাবে হবে?

 

এ নিয়ে গত ২৩ অক্টোবর ঘিওর উপজেলার সিংজুরী বাজারে মানববন্ধন করেন কৃষকরা। এতে কমপক্ষে দুই শতাধিক কৃষক অংশগ্রহণ করেন। তাদের একটাই দাবি, অতিরিক্ত টাকা দিলেই সার পাওয়া যাচ্ছে; টাকা না দিলে কোনো সারই পৌঁছাচ্ছে না। তারা ন্যায্য মূল্যে সার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

 

তবে অতিরিক্ত দামে বিক্রির কথা অস্বীকার করে সার সংকটের কথা বলছেন ডিলাররা। ঘিওর উপজেলার সিংজুরী বাজারের পাইকারি ও খুচরা ডিলাররা বলেন, কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সার দিতে পারছি না। ডিও (ডিস্ট্রিবিউশন অর্ডার) না পাওয়া পর্যন্ত সমস্যা চলবে। তবে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। একসঙ্গে চাহিদা বেড়েছে, তাই সংকট দেখা দিয়েছে। ডিও পেলে সমস্যার সমাধান হবে।

 

আরও পড়ুন: সোয়া দুই লাখ টন সার-ফসফরিক অ্যাসিড কিনবে সরকার, ব্যয় কত?

 

সারের কোনো সংকট নেই জানিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস কৃষি বিভাগের। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তহমিনা খাতুন জানান, সারের কোনো বাস্তব সংকট নেই। যদি কোনো ডিলার সারের অভাব দেখানোর চেষ্টা করে বা অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরমধ্যে অতিরিক্ত দামের সার বিক্রির দায়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও, পুরো উপজেলায় যাতে কোনো ডিলার অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

 

জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘জেলায় সারের কোনো ঘাটতি নেই। যদি কোথাও সংকট দেখা দেয়, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কেউ অসৎ উপায়ে অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষকদেরও সতর্ক থাকতে হবে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বিআরডিসির তথ্যমতে, জেলায় চলতি মাসে ৯ হাজার ৪৬০ টন সারের মজুত রয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন