গলে প্রথম টেস্টে ভালো ব্যাটিং করে দ্বিতীয় ম্যাচেই যেন দম ফুরিয়েছে বাংলাদেশের। গলের স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী এগিয়ে কলম্বোতেও শুরুতে ব্যাট নিয়েছিল টাইগাররা। তবে এবার প্রথম ইনিংসে তেমন প্রতিরোধই দেখাতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তরা। প্রথম ইনিংসে ২৪৭ রানে অলআউট হয়েছে টাইগাররা।
প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের যুক্তি ছিল পিচ বোলিং সহায়ক। তবে দ্বিতীয় দিন শ্রীলঙ্কা প্রমাণ করল কলম্বোর এই উইকেট কতটা ব্যাটিং সহায়ক। মাত্র ২ উইকেটে ২৯০ রান করে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে লঙ্কানরা। বাংলাদেশের এমন ব্যাটিং যে শুধু উইকেটের কারণেই নয়, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার অভাবেও- সেই ইঙ্গিত মিলেছে কুশল মেন্ডিসের একটি কথায়।
৪৩ রানের লিড নিয়ে দিন শেষ করার পর শুক্রবার (২৭ জুন) শ্রীলঙ্কার হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন দলটির উইকেটরক্ষক ব্যাটার কুশল মেন্ডিস। সামনের ৩ দিনে নিজেদের পরিকল্পনা এবং নিজেদের সামগ্রিক পারফরম্যান্স নিয়ে এদিন কথা বলেছেন লঙ্কান ব্যাটার। পেসারদের পারফরম্যান্স নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় পেসারদের এমন ভালো বোলিং খুব কমই দেখেছেন তিনি।
মেন্ডিস বলেন, ‘আমরা যে পরিকল্পনা করেছিলাম, ওরা ঠিক সেটাই করেছে। লাইন এবং লেন্থ খুব ভালোভাবে মেনটেইন করেছে। এই উইকেটে খুব একটা গতি নেই, তাই সঠিক লেন্থে বল করাটাই সবচেয়ে জরুরি ছিল। শুধু নতুন বলে নয়, পুরনো বলেও ওরা অসাধারণ ছিল। শ্রীলঙ্কায় আমি আমাদের পেসারদের এত ভালো বোলিং খুব কমই দেখেছি।’
কলম্বোয় প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১০ উইকেটের পাঁচটিই নিয়েছেন পেসাররা। আসিথা ফার্নান্দো তিনটি এবং বিশ্ব ফার্নান্দো দুটি। দুজনে মিলে বল করেছেন মোট ৩৭ ওভার। বাকি ৪২.৩ ওভারে ৪ স্পিনার মিলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। স্পিন সহায়ক শ্রীলঙ্কায় নিঃসন্দেহেই এখানে পেসারদের পারফরম্যান্সকে এগিয়ে রাখতে হবে। আর সেটার প্রশংসাই করেছেন কুশল।
আরও পড়ুন: বড় লিডের বার্তা দিয়ে দিন শেষ করল শ্রীলঙ্কা
তবে এই প্রশংসার মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্বলতার দিকেও যে লুকায়িত একটা ইঙ্গিত আছে, সেটাও এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। কারণ যেই পিচে লঙ্কান পেসাররা ৩৭ ওভার বোলিং করে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশি পেসাররা ২১ ওভার বোলিং করে পাননি একটি উইকেটও। অন্যদিকে, বাংলাদেশি স্পিনাররা ৫৭ ওভার বোলিং করে নিয়েছেন কেবল ২ উইকেট।
অভিজ্ঞতার দিক থেকে বাংলাদেশের এই বোলিং ইউনিট লঙ্কানদের চেয়ে খানিকটা এগিয়ে। তবে স্বাভাবিকভাবেই কন্ডিশনের কিছুটা সুবিধা পেয়েছে লঙ্কানরা। কিন্তু সেটা যে অনেক বেশি, এমনও নয়। বাংলাদেশি পেসাররাও সঠিক চ্যানেলে বোলিং করার চেষ্টায় কমতি রাখেননি। তবে একটা পরিকল্পনায় লঙ্কানরা বেশ সফল- পেসারদের কোনোভাবেই সহজে উইকেট না দেয়া।
অন্যদিকে, বাংলাদেশি ব্যাটাররা পেসারদের উইকেট বিলিয়ে এসেছেন সমানতালে। এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কান বোলারদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। তবে বাংলাদেশি ব্যাটারদের কমতিটাও ভালোভাবেই আলোচনায় আসার মতো। আর সেই কমতির কারণেই এমন স্পিন সহায়ক উইকেটেও দাপট দেখিয়েছেন পেসাররা। কুশলের বক্তব্যেও আছে তার সূক্ষ্ম ইঙ্গিত।
বাংলাদেশি ব্যাটারদের ব্যাটিং ব্যর্থতার কথা অবশ্য স্বীকারই করে নিয়েছেন টাইগার হেড কোচ ফিল সিমন্স। শ্রীলঙ্কার অপ্রতিরোধ্য ব্যাটিং দেখার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, 'আসলে যে ট্রিকটা আমরা মিস করেছি তা হচ্ছে আমরা বেশি বড় জুটি গড়তে পারিনি। যার ফলে আজকে ২-৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাট করার সুযোগ পাইনি। এটা আমাদের দিকে ফিরে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, গতকালের ব্যাটিং এবং জুটি আমাদেরকে বেশ ভুগিয়েছে। (ব্যাটারদের ইনিংস লম্বা করতে না পারা) এই কারণেই আজকে আমরা ব্যাট করছি না। আমার মনে হয় অন্তত ২-৩ জন ব্যাটারের উচিত ছিল লম্বা ইনিংস খেলা এবং দলের রান বাড়িয়ে নেওয়া। নিসাঙ্কা আজকে এটা করে দেখিয়েছে। আশা করি আমরা এটা শিখে দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেরা বড় স্কোর করতে পারব।’
এদিকে, ম্যাচ নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে সাজিয়ে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় দিনের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের পর লিডটা ২০০'র কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে স্বাগতিকরা। এ প্রসঙ্গে কুশল মেন্ডিস বলেন, ‘আমরা এখন খুব ভালো অবস্থানে আছি। আগামীকাল আমাদের পুরো দিন ব্যাট করতে হবে। আমরা চেষ্টা করব ১৫০ থেকে ২০০ রানের লিড নেওয়ার। আশা করছি, শেষ দুই দিনে উইকেট টার্ন করবে।’
প্রথম ম্যাচে গলে ২১১ রান করা পাথুম নিসাঙ্কা কলম্বোতে প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানে অপরাজিত আছেন। এই ইনিংস নিয়ে কুশল মেন্ডিস বলেন, ‘তাকে (নিশাঙ্কা) দেখাটা সত্যিই দারুণ উপভোগ্য ছিল। দারুণ ব্যাট করেছে। আগের সফরেও ও রান পেয়েছিল। গলে ডাবল সেঞ্চুরি মিস করাটা দুর্ভাগ্যজনক ছিল। আশা করি, এই ম্যাচে সেটা করতে পারবে। ও এখন তিন ফরম্যাটেই আমাদের সবচেয়ে ফর্মে থাকা ব্যাটার। নিজের খেলার উপর ও কঠোর পরিশ্রম করে, সেটার প্রমাণ মাঠে দেখায়।’
কলম্বো টেস্টে অভিষেক হওয়া সোনাল দিনুশাকে নিয়ে মেন্ডিস বলেছেন, ‘সে প্রথমবার সিসিসিতে (কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব) খেলতে আসে যখন আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম। স্কুল শেষ করার পরই সিসিসিতে চলে আসে। দারুণভাবে খেলেছে। শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের হয়ে ভালো পারফর্ম করেছে। টেস্ট ক্রিকেটে খেলা অনেক বেশি চাপের, টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডের চেয়ে। কিন্তু সে অনেক পরিণত ব্যাটিং করেছে। এমন একজন খেলোয়াড় দলে থাকাটা সত্যিই আনন্দের। আমি ওর জন্য খুবই খুশি।’
]]>