অভিযানে নেতৃত্ব দেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ। অভিযানে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও বন বিভাগের প্রায় চার শতাধিক সদস্য অংশ নেন। এতে জবরদখলমুক্ত হয় প্রায় ৪ একর বনভূমি, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান জানান, গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরপরই শ্রীপুর রেঞ্জের অধীনে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এক বিশাল অংশ জবরদখল করে অসংখ্য অবৈধ বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়। গাছ কেটে বনভূমি দখল করে ফেলা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ৫ আগস্টের পর গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ।
অভিযানের পর ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেন ঘর হারানো অনেকে।
গার্মেন্টসকর্মী আকলিমা আক্তার বলেন, শরীরের রক্ত পানি করে গার্মেন্টসে কাজ করে উপার্জিত টাকা দিয়ে এক ঘর তুলছিলাম। আজ এসে আমাকে গাছ তলায় বসিয়ে দিলো। আশপাশে শত-শত ঘরবাড়ি—সেগুলো থাকলো, শুধু আমার ঘর চোখে পড়লো! এই অবুঝ শিশু নিয়ে এখন কোথায় থাকব? তিনি বলেন, তাদের কোনো জমি নেই, কোথাও যাওয়ারও জায়গা নেই।
একইভাবে গার্মেন্টসকর্মী নূরুল ইসলাম বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে কষ্ট করে একটি ঘর বানিয়েছি। যদি জমি থাকতো, তাহলে কি আমরা বনভূমিতে ঘর বানাতাম? আপনারা দেখেন—আমাদের ঘরের আশপাশে একটা গাছও কি কেটেছি?
আরও পড়ুন: অবৈধ স্থাপনা পেলেই গুঁড়িয়ে দিচ্ছে রাজউক
রুহুল আমিন নামে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত বলেন, শেষ সম্বল খরচ করে এই ঘর তুলেছিলাম। নিমেষেই আমার স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশে গেলো। ঘর না থাকলে কীভাবে বাঁচব?
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল আল মামুন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই বনভূমি দখলের এক মহোৎসব শুরু করে একটি কুচক্রী মহল। গাছপালা কেটে বনভূমি দখল করে হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সব ভেঙে বনভূমি উদ্ধার করবো। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শ্রীপুর ইউএনও সজীব আহমেদ বলেন, বনভূমি রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। ৫ আগস্টের পর গড়ে ওঠা ৫৬টি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে প্রায় ৪ একর বনভূমি উদ্ধার হয়েছে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ২০ কোটি টাকা।
তিনি আরও জানান, অভিযানে অংশ নিয়েছে প্রায় চার শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।