জানা যায়, শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার আগেই শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ আসন গ্রহণ করে। শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, তারা পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ সময় দেখার জন্য কাঁটাযুক্ত সাধারণ হাতঘড়ি সঙ্গে নিয়ে যান। কিন্তু তাদের হাত থেকে কাঁটাযুক্ত সাধারণ ঘড়িগুলো খুলে অভিভাবকদের কাছে দিতে বাধ্য করে কর্তৃপক্ষ।
অভিভাবকদের অভিযোগ, কেন্দ্রের কক্ষগুলোতেও ছিল না সময় দেখার কোনো ব্যবস্থা। সময় দেখার ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের সময় নির্ধারণ করে প্রশ্নের উত্তর লিখা এবং সঠিক সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা করছেন তারা।
বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনলে পরীক্ষা শুরু হওয়ার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রে ঘড়ি নেয়া হয়। এসময় কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করা অভিভাবকরা ঘড়ি বহনকারী রিকশাকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেন। পরে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ঘড়িগুলো কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করান।
আরও পড়ুন: পরীক্ষা দিতে পারেনি ১৩ শিক্ষার্থী, প্রধান শিক্ষক পুলিশ হেফাজতে
পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করা অভিভাবকরা বলেন,
বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় সাতটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এই উত্তরগুলো দিতে তাদের সময় একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সময় ধরে ধরে প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে অভ্যস্ত। তাদের সময় দেখার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শতভাগ উত্তর লিখার সময় নির্ধারণ করতে হিমশিম অবস্থায় পড়বে তারা। আর হল কর্তৃপক্ষও কক্ষে সময় দেখার ব্যবস্থা না করায় বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের এমন অবহেলায় শিক্ষার্থীদের জীবনে বড় রকম ক্ষতি হবে। কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতায় শিক্ষার্থীদের জীবনের যে বিপর্যয় নেমে আসবে তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি দরকার।
এ বিষয়ে সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমির প্রধান শিক্ষক এবং কেন্দ্র সচিব আনিছা বেগম বেলী সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটি রুমে ঘড়ি লাগানোর সময় পাইনি। আপনি একটু অপেক্ষা করেন, আমরা এখনি প্রত্যেকটি কক্ষে ঘড়ি লাগিয়ে দিচ্ছি।’
পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে আসা জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ফাহমিদা সুলতানা বলেন,
শুধু শিক্ষার্থী নয়, কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা কোনো শিক্ষক ডিজিটাল ঘড়ি বা মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার নিয়ম নেই। তবে সাধারণ ঘড়ি কেন্দ্রে নিয়ে আসায় কোনো বাধা নেই। শিক্ষার্থীদের সাধারণ ঘড়ি ব্যবহার করতে দেয়া কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল। এ বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।
আরও পড়ুন: জয়পুরহাট কারাগারে এসএসসি পরীক্ষা দিলো এক ছাত্র
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান বলেন, ‘পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোনসহ ডিজিটাল হাতঘড়ি নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু সাধারণ ঘড়ি নিয়ে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে। তবে কে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হলে সাধারণ ঘড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে, সেটা আমি খতিয়ে দেখবো।’
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন,
বিষয়টি আমি শুনেছি। কেন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে সাধারণ ঘড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এবং এর সঙ্গে কে জড়িত তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীরা সাধারণ ঘড়ি নিয়ে হলে প্রবেশ করতে কোনো বাধা নেই।
শেরপুর জেলায় ৪৩টি কেন্দ্রে মোট ১৮ হাজার ৪১৯ জন শিক্ষার্থী এবার এসএসসি এবং সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন।
]]>