শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম

২ সপ্তাহ আগে
তীব্র শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে লক্ষ্মীপুর সরকারি (অনার্স) কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে মানসম্মত শিক্ষাকার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মকর্তার ৭৬টি পদ থাকলেও নিয়মিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৪৫ জন। শিক্ষক সংকট থাকায় এক বিষয়ের শিক্ষক নিচ্ছেন অন্য বিষয়ের ক্লাস। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, হুমকির মুখে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স কলেজে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। ১৯৯৪ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে অনার্স কোর্স চালু হয়। কলেজটিতে বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ান ও গণিতসহ ১১টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু থাকলেও আগের জনবল কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মকর্তা দিয়েই চলছে এর শিক্ষা কার্যক্রম। এখনও সৃজন হয়নি শিক্ষক-কর্মকর্তার নতুন কোনো পদ।


বর্তমানে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় স্থবির হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মকর্তার ৭৬টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৪৫ জন। ১৭ জন অধ্যাপক পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৭ জন। আর ২২ জন কর্মচারীর বিপরীতে আছেন ৭ জন। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। শিক্ষক সংকট থাকায় মানসম্মত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।


শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না তাদের। নানা সংকটে ব্যবহারিক ক্লাস থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। নিয়মিত ক্লাস না পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তাদের শিক্ষাজীবন।


আর শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষক সংকট থাকায় অতিরিক্ত ক্লাস নিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এতে মানসম্মত শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বাংলা বিভাগের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সংকট থাকায় আমরা ঠিকমতো ক্লাসগুলো পাচ্ছি না। এতে আমাদের শিক্ষার খাটতি হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে এই কলেজে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে চরম ভুল করেছি। শিক্ষাজীবনটাই এখন পড়েছে হুমকির মুখে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেন, মাত্র একজন শিক্ষক দিয়েই চলছে এই কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে হুমকির মুখে পড়েছে হাজারও শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। অবস্থার দৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিষয়টি দেখার যেন কেউই নেই।


রসায়ণ বিভাগের অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলেন, 'অনেক আশা নিয়ে রসায়ন ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছি। অথচ এখন নিয়মিত ক্লাসগুলোই হচ্ছে না, পাচ্ছিনা ব্যবহারিক ক্লাসও। মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়ে চলছে পুরো কলেজের রসায়ণ বিভাগের পাঠদান কার্যক্রম। এতে শিক্ষাজীবন নিয়ে হুমকির মধ্যে পড়ছি আমরা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মানসম্মত শিক্ষা না পেলে, ভবিষ্যৎ-এ দেশ ও জাতির কল্যাণে আমরা আদৌ কি কোন ভুমিকা রাখতে পারব?'


আরও পড়ুন: ১৫ বছর ধরে হয়নি সংস্কার, হাঁটু সমান গর্ত লক্ষ্মীপুর পৌর বাস টার্মিনালে


কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদা বেগম বলেন, 'শিক্ষক স্বল্পতার কারণে আমাদের নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। এতে পড়াশুনা থেকে পিছিয়ে পড়ছি আমরা। অথচ কলেজটি লক্ষ্মীপুর জেলার শ্রেষ্ট বিদ্যাপিঠ। শিক্ষক সংকট দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া দরকার, না হলে হুমকির মধ্যে পড়বে আমাদের শিক্ষাজীবন।'


রসায়ণ বিভাগের প্রভাষক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হোসেন মোবারক বলেন, 'এই বিভাগে আমরা মাত্র দুইজন শিক্ষক রয়েছি। অনার্স, ডিগ্রি ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানসহ ল্যবরেটরি ফ্যাসিলিটিস আমরা দিতে পারছি না। শ্রেণি কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষক সংকট সমাধান করা দরকার। তা নাহলে মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।'


ইংরেজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন আহাম্মদ ভূঁইয়া রিপন বলেন, 'মাত্র ৩জন শিক্ষক-কর্মকর্তা দিয়ে চলছে কলেজের ইংরেজি বিভাগের পাঠদান কার্যক্রম। এতে সব শ্রেণির ক্লাস নিয়মিত পরিচালনা করা আমাদের পক্ষে অনেকটাই কষ্টসাধ্য। ফলে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।'


আরও পড়ুন: ‘মৃত্যুঝুঁকি’ নিয়ে চলাচল লক্ষ্মীপুর-রায়পুর-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কে!


ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মওদুদ এলাহী বলেন, 'শিক্ষক সংকট থাকায় অনার্স-মাস্টার্সসহ বিভিন্ন শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম যথাযথসভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের যে আমরা গুনণত শিক্ষা দিব, সে জায়গায় আসলে আমরা যেতে পারছিনা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, অতিরিক্ত ক্লাস নিতে গিয়ে আমি যখন ক্লান্ত, তখন শিক্ষার্থীদের কি মানসম্মত কোনো ম্যাসেজ দিতে পারছি? তিনি আরও বলেন, শিক্ষক সংকট থাকায় আমাদের ভোগান্তির চেয়েও সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে সীমাহীন সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।'


এদিকে শিক্ষক সংকটের কারণে মানসম্মসত পাঠদান করানো যাচ্ছেনা স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাম্মদ মঞ্জুরুর রহমান বলেন, 'বিষয়টি বার বার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও সমাধান মেলেনি। তবে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে অতিথি শিক্ষক দিয়েও চালানো হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। তবে শিক্ষক সংকট নিরসন হলে কলেজের পাঠদান কার্যক্রম গতিশীল হবে। এতে উপকৃত হবে কোমমতি শিক্ষার্থীরা।'


১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ ১৯৮০ সালে জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে অনার্স-মাস্টার্সসহ প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন