শত বছর ধরে রশি টানছে সালথা-নগরকান্দার ২০ গ্রামের মানুষ

৩ সপ্তাহ আগে
ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের অভাবে দুর্ভোগের শেষ নেই দুই উপজেলার ২০ গ্রামবাসীর। বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহালেও এখানে নির্মাণ করা হয়নি সেতু। এতে নারী, শিশু ও বয়স্কদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

শত বছর ধরে রশি টেনে টেনে নৌকা করে পার হন সবাই। ভোগান্তি দূর করতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি ২০ গ্রামের মানুষের। এদিকে ইউএনও ও উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


একদিকে সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া, অপরদিকে নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে কুমার নদ। দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী দুটি ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষকে চলাচল করতে হয় এ নদের ওপর দিয়ে। কিন্তু নদ পার হওয়ার জন্য নেই কোনো সেতু। নদের মধ্যে রয়েছে একটি কাঠের নৌকা। নৌকাটির দুই মাথায় রশি বাঁধা। নৌকায় কোনো মাঝি নেই। সাধারণ মানুষ নৌকায় উঠে নিজেরাই রশি টেনে এপার থেকে ওপার যাচ্ছেন।


এখান দিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকেও পারাপার হতে হয়। পরিস্থিতি এমনও হয় শিশু শিক্ষার্থী বা শুধু নারীরা যখন পারাপারের অপেক্ষায় থাকেন, তখন তাদের নদের পাড়েই বসে থাকতে হয়। এরপর যখন কোনো পুরুষ পার হতে আসেন, তখন তিনি (পুরুষ) দড়ি টেনে সবাইকে নিয়ে পার হন।

 

সালথার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কুমারপট্টি, খলিশপট্টি, মাঝারদিয়া, হরিণা, নারানদিয়া, তুঘুলদিয়া গ্রাম এবং নগরকান্দার লস্করদিয়া ইউনিয়নের কল্যাণপট্টি, আইনপুর, কুমারকান্দা, বাগুটিয়া, সাভারসহ ২০টি গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার লোকের পারাপার এবং মাঠ থেকে ফসল বাড়িতে নেয়ার এটিই সহজ পথ।


আরও পড়ুন: নির্মাণ কাজে ধীরগতি, একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে শিবচরের তিন ইউনিয়নের মানুষ


কৃষি উৎপাদনে খ্যাত ওই এলাকার বাসিন্দারা মাঝারদিয়া কুমার নদের এ ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে। তবে তাদের দাবি পূরণ হয়নি। ফলে চরম বিপাকের মধ্য দিয়ে উৎপাদন করা ফসলসহ নিজেরা ঘাট পারাপার হয়ে আসছে তারা।


স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত নৌকায় করে কুমার নদ পার হয়ে এপার থেকে ওপার যেতে হয়। বৃষ্টির দিনে সমস্যায় বেশি পড়তে হয়। মাঝে মধ্যেই নৌকা থেকে শিশু ও বৃদ্ধরা পরে গিয়ে আহত হয়। দীর্ঘদিন যাবত একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও কেউ কর্ণপাত করছে না।


গৃহবধূ শারমিন আক্তার বলেন, ছেলেকে স্কুলে দিতে আমি নিজে তার সঙ্গে যাই। ভয় লাগে নৌকায় একা পার হতে তাই ছেলের সঙ্গে আমাকে যেতে হয়। নৌকার কোনো মাঝি নেই, নিজেরাই রশি টেনে পার হতে হয়। অনেক সময় বসে থাকতে হয়, ওপারে নৌকা থাকে, কেউ না আসলে নৌকা এপারে আসে না। স্কুলের সময় অনেক সময় পেরিয়ে যায়।


সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা কৃষি ফসল উৎপাদনের জন্য জেলার মধ্যে বিখ্যাত। জমি থেকে ফসল বাড়িতে আনতে বিপাকে পড়তে হয় জানিয়ে চাষি রাশেদ শেখ বলেন, অনেক সময় নৌকায় ফসল আনতে গিয়ে তলিয়ে যায়, ক্ষতির সন্মুখীন হতে হয়। আবার ফসল বিক্রি করতে বাজারে নিতে গেলেও সমস্যায় পড়তে হয়। আশপাশের যে সড়ক বা সেতু রয়েছে তা দিয়ে যেতে গেলে ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়, তাতে করে সময় ও অর্থ দুইই অপচয় হয়।


আরও পড়ুন: যমুনা রেলসেতুর পিলারে 'ফাটলের' ছবি ভাইরাল, কী বলছে কর্তৃপক্ষ?


স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আক্তার হোসেন বলেন, কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিপাকে পড়তে হয়। কারণ দিনের বেলায় যানবাহন পেলেও রাতে কোনো বাহন পাওয়া যায় না। নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে রাতে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এর আগে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হওয়ায় তিনি মারা যান। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়ে দুই উপজেলাবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে এবং ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে এলাকাবাসী।


এলজিইডি’র সালথা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিয়া জানান, বিষয়টি জানতে পেরেছি। জনগণের ভোগান্তি দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।


সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মামুন সরকার জানান, জনগণের ভোগান্তি দূর করতে ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি অবগত করা হবে। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ওই জায়গায় নদের প্রশস্ততা আনুমানিক ১১০ মিটার। ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর ভোগান্তি দূর করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন