শত কোটি টাকা আত্মসাৎ: মধুমতির বিরুদ্ধে আবারও প্রতারণার অভিযোগ

৩ সপ্তাহ আগে
প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের শতকোটি টাকা আত্মসাৎকারী মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আবারও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, জামানতের টাকা ফেরতের দাবিতে করা মামলার বাদিদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে, তাদের নতুন করে আর কোনো মামলা না করার এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করার শর্তে বাধ্য করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এক মাস ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরামবাগ এলাকায় মধুমতি গ্রাহক সেবা অফিসে ডেকে মামলার বাদিদের ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করাচ্ছে মধুমতির কর্মকর্তারা। কেউ স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

 

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মধুমতির ৪৬টি শাখায় প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক মোট ১০৫ কোটি টাকা জমা রেখেছিলেন। ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর অবৈধ অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ রানা। এরপর টাকা ফেরতের দাবিতে প্রায় ৪০০ মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। বর্তমানে মাসুদ রানা ও তার পরিবারের অন্তত ১৮ জন সদস্য কারাগারে থাকলেও গ্রাহকরা এখনও টাকা ফেরত পাননি।

 

ভুক্তভোগীরা জানান, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলা হলেও সেখানে কী লেখা হবে তা জানানো হয় না এবং এক কপি কাগজ নিজেরা নিতে চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানায় কর্মকর্তারা। কেউ রাজি না হলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে হুমকি দেয়া হয়।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধুমতির এক কর্মকর্তা জানান, আপাতত ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে পরে কিছু শর্ত লেখা হবে। শর্তের মধ্যে থাকবে নতুন করে মামলা না করা, কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না আনা, আসামিদের জামিনে আপত্তি না করা এবং উত্তোলিত অর্থ নিয়ে ৯ সদস্যের কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া। এই তথ্য একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

আরও পড়ুন: প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর যুবককে কুপিয়ে জখম

 

শিবগঞ্জের গ্রাহক সেরাজুল ইসলাম জানান, ২ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তার। অফিসে গিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলা হলেও কি লেখা হবে তা জানতে চাইলে দেখানো হয়নি। তাই তিনি স্বাক্ষর না করেই চলে আসেন।

 

মামলার বাদি মাউন রেজা জানান, তার পাওনা ৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। তাকেও একইভাবে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে।

 

আরেক বাদি মনিরুল ইসলাম (ছদ্মনাম) জানান, তাকে স্বাক্ষর করতে চাপ দেয়া হয় এবং অস্বীকৃতি জানালে স্থানীয় এক জামায়াত ও এক বিএনপি নেতার মাধ্যমে হুমকি দেয়া হয়।

 

অভিযোগ রয়েছে, গ্রাহকদের থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে সেগুলো জেলা প্রশাসন ও আদালতে উপস্থাপন করে আসামিদের জামিনের চক্রান্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গ্রাহকদের ঋণের প্রায় ৪ কোটি টাকা উত্তোলন করা হলেও তা ফেরত দেয়া হয়নি। শহরের অস্থায়ী অফিস থেকেও সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

 

এ বিষয়ে মধুমতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করাচ্ছি টাকা ফেরতের জন্য। তবে শর্তগুলো স্বাক্ষরের আগে পড়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।’ যদিও শর্তগুলো দেখতে চাইলেও তিনি তা দেখাননি এবং কোনো গ্রাহক স্বাক্ষর করেছেন কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘সমঝোতার ভিত্তিতে টাকা ফেরতের মাধ্যমে আসামির জামিন হতে পারে। তবে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে জোরপূর্বক সমাধানের সুযোগ নেই। এ ধরনের কার্যক্রম বেআইনি।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন