এলাকার নদী ও খালে সারা বছর লবণ পানি থাকায় রামপালে চিংড়ি ছাড়া অন্য কোনো ফসল ভালো হয় না। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সৌদি খেজুর চাষে সফল হয়েছেন পেশায় আইনজীবী জাকির হোসেন।
তিনি জানান, ২০১৪ সালে ১৫ একর জমিতে মৎস্য চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু চিংড়ি ও বিভিন্ন ফল চাষে আশানুরূপ লাভ না পেয়ে ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৯ সালে উত্তরবঙ্গ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে ৬০টি সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করেন। পাঁচ বছর পর তার ৫০টির বেশি গাছে ফল ধরেছে। আশা করছেন, এক বছরের মধ্যে আরও ২০০ গাছে ফলন হবে।
আরও পড়ুন: সৌদি আরব-বাহরাইনের খেজুর চাষ হচ্ছে সাতক্ষীরায়
স্থানীয় কৃষক মো. ছালাম বলেন, ‘আগে এই জমিতে শুধু বাগদা চিংড়ি হতো। আর কিছু করলে লোকসান হতো। এখন যেভাবে খেজুর ধরছে, আমাদেরও আগ্রহ বাড়ছে। দিহিদার ভাই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’
যুবক উদ্যোক্তা লতিফ শেখ জানান, ‘তার সাফল্য দেখে অনেক তরুণ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আমি নিজেও চিন্তা করছি চারা এনে চাষ শুরু করব।’
খামারের শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চারা লাগানোর সময় মানুষ হাসাহাসি করত। এখন সবাই খেজুর দেখতে আসে। যারা আগে হাসতো, এখন স্যারকে বাহবা দিচ্ছে।’
জাকির হোসেন জানান, বর্তমানে তার খামারে আড়াই হাজার সৌদি খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টিতে ফল ধরেছে, অনেক গাছে ফুল এসেছে। গাছপ্রতি ২৫-৩৫ কেজি ফলন হতে পারে। তবে মরু এলাকার গাছ হওয়ায় শুরুতে জলবায়ুর সাথে খাপ খাওয়াতে সময় লেগেছে। পানি ব্যবস্থাপনা, ইঁদুরের উপদ্রব ও রোগবালাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কম পানি দিলে গাছ শুকিয়ে যায়, বেশি দিলে পচে যায়। তবুও পরিচর্যা ও অধ্যবসায়ের কারণে এবার সাফল্য মিলছে।
আরও পড়ুন: খেজুর খাওয়া কেন জরুরি, কারা খাবেন না?
তিনি বলেন, ‘হোয়াইট ফ্লাই ও শুঁটি মূল নামে দুটি রোগে গাছ আক্রান্ত হয়। ইঁদুরও ক্ষতি করে। সরকার যদি প্রয়োজনীয় কীটনাশক সহজলভ্য করে, তাহলে খামারিরা উপকৃত হবে।’
নতুন চাষিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বীজের চারা থেকে পুরুষ গাছ বেশি হয়, ফলে ফল আসে না। তাই অপশুট বা কলম চারা কিনলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়।’
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘সৌদি খেজুর সাধারণত মরু এলাকার ফসল। কিন্তু জাকির হোসেন সফল হয়েছেন। এর স্বাদ ও উৎপাদন ঠিক থাকলে এই অঞ্চলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’
]]>