লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও কক্সবাজারে লবণ উৎপাদনের রেকর্ড

১ সপ্তাহে আগে
বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি মৌসুমে বন্ধ হয়ে গেছে লবণ উৎপাদন। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আগেই শেষ হয়ে গেল লবণ উৎপাদন কার্যক্রম। তবুও দেশে ৬৪ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ লবণ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের তথ্যমতে, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৬৯ হাজার ১৯৮ একর জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছিল। এসব জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা পূরণ হতে পারেনি। ১৭ মে পর্যন্ত উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন, অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার থেকে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪৯ মেট্রিক টন কম। ১৮ মে থেকে লবণ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।


বছরের শুরু থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাষিরা বারবার লবণ উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। বিশেষ করে এপ্রিল মাসের শেষে এবং মে মাসে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়েছে।


স্থানীয় চাষি নুরুল কবির বলেন, ‘একবার বৃষ্টি হলে টানা সাত থেকে নয় দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকে। যদি বৃষ্টিপাত না হতো, আমরা আরও আনুমানিক ২০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করতে পারতাম।’


বৃষ্টির পানিতে উপকূলীয় লবণের মাঠ সয়লাব হয়েছে, যা চাষিদের জন্য বড় ধাক্কা। শনিবার (২৪ মে) বিকেলে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল উপকূলে দেখা গেছে, মাঠে বৃষ্টির পানি জমে আছে, আর চাষিরা সেচের পানি ও বৃষ্টির পানির উপস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। আগেই পলিথিন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে যাতে পানি জমে না থাকে।


আরও পড়ুন: মাঠের চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ন্যায্যমূল্যে লবণ কিনবে সরকার


বিসিকের তথ্যমতে, চাষিরা উৎপাদিত ১৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি লবণ মজুদ রেখেছেন। বাজারে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়ে সাড়ে ৬ থেকে ৭ টাকা। কিন্তু প্যাকেটজাত লবণের খুচরা মূল্য বাজারে ৩০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। চাষিরা লবণ উৎপাদনে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করেন প্রতি মণ। এই পরিস্থিতিতে চাষিরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।


বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল বলেন, চলতি মৌসুমে ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। মাঠ পর্যায়ে এখন চাষিদের হাতে ১৪ লাখ মেট্রিক টন অবিক্রীত লবণ রয়েছে, যা দেশের ৭ থেকে ৮ মাসের চাহিদা পূরণ করতে পারবে। আগামী নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর থেকে লবণ উৎপাদন আবার শুরু হবে।


লবণ উৎপাদন জেলায় প্রায় ৪১ হাজার ৩৫৫ জন প্রান্তিক চাষি এবং ১ লাখ শ্রমিকসহ কয়েক লাখ মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে লবণ উৎপাদন, পরিবহণ ও ব্যবসায় জড়িত। লবণ উৎপাদনের খরচ ও বিক্রির অনিয়মিত মূল্য তাদের জীবিকায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।


আরও পড়ুন: পিরোজপুরে মাটি থেকে তৈরি হচ্ছে লবণ!


বিসিকের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, লবণের দাম কম থাকায় অনেক চাষি লবণ গর্তে মজুদ রেখেছেন। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ মাঠে মজুদ রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে এখন লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, তবে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, এপ্রিল মাসে আবহাওয়া ভালো থাকলেও খরতার কারণে কিছুটা উৎপাদন কম হয়েছে। পরে বৃষ্টিপাতের দফায় দফায় বাধা পড়ায় উৎপাদনে ঘাটতি হয়েছে। চাষিরা অনেকেই দেরিতে মাঠে নামার কারণে বা দ্রুত উঠে যাওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হয়নি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন