২০০০ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ স্টেজ থেকে ২০২৫ এর উয়েফা নেশন্স লিগের সেমিফাইনাল; ২৫ বছরের আগে পরের দুই দুই ম্যাচ। রটারডামে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচটায় জার্মানি হেরেছে ৩-০ গোলে। আর দ্বিতীয়টা তো গতরাতের টাটকা স্মৃতি। এবার অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় পর্তুগালের জয়ের ব্যবধান ২-১ গোলের।
এই দুই ম্যাচের স্কোরকার্ডে লুকিয়ে আছে দারুণ এক গল্প। এক পিতা-পুত্র জুটির গল্প। জার্মানির বিপক্ষে ২৫ বছর আগে-পরের দুই জয়েই জড়িয়ে এই পিতা-পুত্র জুটি।
টাইমমেশিনে চড়ে ২৫ বছর পূর্বে ফিরে যাওয়া যাক; ২০০০ সালে ইউরোর গ্রুপ পর্বের ম্যাচটায় লোথার ম্যাথাউস-অলিভার কানদের জার্মানিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় পর্তুগাল। সেটা সেলেসাওদের সোনালি প্রজন্মের উত্থানের সময়। লুইস ফিগো, রুই কস্তা, পাউলেতারা তখন নিজেদের সেরা সময়ে পা রাখছেন। সেই তুলনায় তারকাখ্যাতিতে পিছিয়েই ছিল সার্জিও কনসিয়াকাও নামটা। অথচ জার্মানিকে হারানোর নায়ক বনে গেলেন কনসিয়াকাও, তাও আবার হ্যাটট্রিক করে! ম্যাচের ৩৫, ৫৪ ও ৭১ মিনিটে গোল করে পর্তুগিজদের জয় এনে দেন কনসিয়াকাও।
আরও পড়ুন: ম্যাচ খেলতে চিলির এয়ারপোর্টে পৌঁছে বিড়ম্বনায় লিওনেল মেসিরা
এবার বর্তমানে ফিরে আসার পালা। গতরাতের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় সেমিফাইনালের মঞ্চে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফ্লোরিয়ান ভির্টজের গোলে লিড নিয়েছে জার্মানি। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের ক্ষণ গুনছে পর্তুগিজদের আরেক সোনালি প্রজন্ম। রোনালদো, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, বের্নার্দো সিলভারা গোলের জন্য হাপিত্যেশ করে মরছে।
কোচ রবার্তো মার্তিনেজ ৫৮ মিনিটে উইংয়ের ফ্রান্সেসকো ট্রিনকাওকে উঠিয়ে মাঠে নামালেন ২২ বছর বয়সী ফ্রান্সেসকো কনসিয়াকাওকে। আর মাঠে নামার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পর্তুগিজদের ম্যাচে ফেরালেন পোর্তো থেকে ধারে জুভেন্টাসে খেলতে যাওয়া এই উইঙ্গার। নিজেদের অর্ধ থেকে রুবেন দিয়াসের পাস ধরে দ্রুতগতিতে উইং ধরে আড়াআড়ি দৌড় দিলেন। পৌঁছেও গেলেন জার্মানির ডি-বক্সের কাছাকাছি। এরপর হঠাৎই নিলেন বুলেট গতির শট।
জার্মানির গোলরক্ষক টার স্টেগান যথাসাধ্য চেষ্টা করলেন। বাজপাখির মতো হাতদুটো প্রসারিত করে উড়াল দিলেন, তবু বলেন নাগাল পেলেন না। দর্শণীয়ভাবে বাঁক নিয়ে বল জালে জড়িয়ে গেল।
এর পাঁচ মিনিট পরই রোনালদো করলেন জয়সূচক গোল। কিন্তু ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া গোল করে নায়ক বনে গেলেন বদলি নামা কনসিয়াকাও। ঠিক যেভাবে হ্যাটট্রিক করে তার বাবা সার্জিও ২৫ বছর আগে সবশেষবার জয় এনে দিয়েছিলেন পর্তুগিজদের।
আরও পড়ুন: হামজার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ ফুটবলে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে: ভুটানের কোচ
সার্জিও ও ফ্রান্সিসকো বাপ-ছেলে দুজনেরই ফুটবলের হাতেখড়ি পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোয়। সার্জিও এরপর লাতসিও, পারমা, ইন্টার মিলানের মতো ক্লাবে খেলে কোচিং পেশায় জড়িয়েছেন। আর পোর্তোর কোচ থাকাকালীন সময়ে তার অধীনেই প্রথম পোর্তোর সিনিয়র দলে সুযোগ পান ফ্রান্সেসকো। এরপর ২০২২ সালে আয়াক্সে যোগ দেন। সেখান থেকেও প্রথমে ধারে ও পরে পাকাপাকিভাবে ফের পর্তুগিজ ক্লাবটিতে ফেরেন। এই মুহূর্তে ধারে ইতালির জায়ান্ট জুভেন্টাসে খেলছেন তিনি।
পর্তুগাল জাতীয় দলে ২০২৪ সালে অভিষেক ফ্রান্সেসকোর। গত ইউরোয় গ্রুপ পর্বে চেক রিপাবলিকের বিপক্ষে পান প্রথম গোলের দেখা। সেদিনও ৯০ মিনিটে বদলি হিসেবে নেমে করেছিলেন জয়সূচক গোল। আর ১০ ম্যাচের ক্যারিয়ারে জার্মানির বিপক্ষে পেলেন দ্বিতীয় গোলের দেখা।
বাবা সার্জিও পর্তুগালের জার্সিতে ৫৬ ম্যাচে করেছেন ১২ গোল। কোচিং ক্যারিয়ার শুরুর পর পোর্তোর পর সবশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন এসি মিলানের।