লক্ষ্মীপুরে সুপারির বাম্পার ফলন, ৭০০ কোটি টাকা আয়ের আশা

১ সপ্তাহে আগে
লক্ষ্মীপুরে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন ও অনুকূল আবহাওয়া থাকায় সুপারির এই অতুলনীয় ফলন দেখা দিয়েছে। এতে চাষিরা বেজায় খুশি হলেও, বাজার দর কিছুটা কম থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই বাজার দর কমে গেছে।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর লক্ষ্মীপুরে ৭ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার মেট্রিক টন, কিন্তু বাস্তবে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার মেট্রিক টন। এখানকার উৎপাদিত সুপারির গুণগত মান ভালো থাকায় জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে তা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে চাষিদের পাশাপাশি লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর সুপারি থেকে আয় হবে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি।


রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারকে সুপারির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হিসেবে ধরা হয়। সপ্তাহে দুদিন সেখানে লাখ লাখ টাকার সুপারি কেনাবেচা হয়। এছাড়া সদর উপজেলার দালাল বাজার, লক্ষ্মীপুর বাজার, রাখালিয়া বাজার, মান্দারী বাজার, কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট বাজারসহ জেলার ছোট-বড় প্রায় সব বাজারেই সুপারি বেচাকেনায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।


তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজার দর কিছুটা কম থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক চাষি। তারা বলছেন, গেল বছর প্রতি পোন (৮০ পিস) সুপারি বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, আর এ বছর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। চাষিদের দাবি, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাজার দর কমিয়ে দিয়েছে।


আরও পড়ুন: ভোলা /সুপারি: ২৩০০ কোটি টাকার উৎপাদনেও নেই কৃষি বিভাগের সহায়তা


অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুপারির উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এ বছর বাজার দর কিছুটা কম। এখানকার সুপারির মান ও স্বাদের জন্য এর চাহিদা রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাজার দর ভালো থাকলে তারাও আরও বেশি লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।


সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের চাষি শাহজাহান বলেন, ‘সুপারি চাষে খুব একটা খরচ হয় না, রোগবালাইও কম থাকে। বাড়ির পাশে পাঁচ গন্ডা পতিত জমিতে আমার বাগান। অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। বাজার দর যদি গত বছরের মতো থাকতো, আরও বেশি লাভ হতো।’


রায়পুর উপজেলার চরআবাবিল এলাকার চাষি আবুল হোসেন জানান, ১৫ গন্ডা জমিতে সুপারি বাগান করেছেন তিনি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো বৃষ্টিপাতের কারণে বাম্পার ফলন পেয়েছেন তিনি।


লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের চাষি আলম বলেন, ‘ফলন ভালো হলেও বাজার দর কম থাকায় আমরা হতাশ। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’


অন্যদিকে শাহরিয়ার ও নজিরসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, লক্ষ্মীপুরের সুপারির গুণগতমান ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি।


তারা বলেন, আমরা এখানকার চাষি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সুপারি কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। ফলন বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম থাকলেও আমরা লাভবান হচ্ছি।


আরও পড়ুন: ন্দরবানের পাহাড়ি জমিতে ড্রাগন ফল চাষে বাজিমাত!


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জহির আহমেদ বলেন, ‘সুপারিকে সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে বিবেচনা করা যায়। সুপারির জাত উন্নয়নে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও চাষিদের মাঝে উন্নত জাতের চারা বিতরণ করা গেলে উৎপাদন আরও বাড়বে। চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় আমরা আশা করছি, সুপারি থেকে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি আয় হবে।’


তিনি আরও বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরে অর্থকরী ফসলের মধ্যে সুপারি অন্যতম। বাড়ির আঙ্গিনা ও পতিত জমিতে সুপারি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো বৃষ্টিপাতের কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।’


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অঞ্চলে সুপারি ভিত্তিক শিল্প-কারখানা ও প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র গড়ে তোলা গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আরও বেশি লাভবান হবেন সুপারি চাষিরা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন