রেল লাইনে অসতর্কতায় ঝরছে প্রাণ, দুর্ঘটনা এড়াতে কী পরামর্শ?

৩ সপ্তাহ আগে
রেলে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা থামছেই না। গত দশ বছরে সারা দেশে এভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ হাজার ২৩৭ জন। কম নয় আহতের সংখ্যাও। এই সময়ে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন ৬ হাজার ৩৫৬ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সতর্কতা, সচেতনতা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব এ ধরনের ঘটনা।

চলতি বছরের মে মাসে রেল লাইনে দাঁড়িয়ে ফুলের ছবি তুলছিলেন এক যুবক। হঠাৎ করেই ট্রেনের ধাক্কায় মরতে হলো তাকে। চলতি মাসের শুরুর দিকে বগুড়ায় একটি অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে বিপদজনকভাবে রেললাইনের কাছে গিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুবরণ করেন এক মোটরসাইকেল আরোহী কলেজ ছাত্র। এরকম নানভাবে দিনের পর দিন ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ।  

 

বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার নানা কারণ উঠে এসেছে। রেল লাইনে বসে, হাঁটতে হাঁটতে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা বা কথা বলা। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে রেলক্রসিং পার হওয়ার চেষ্টা, ঝুঁকিপূর্ণভাবে ট্রেনের ছাদে ওঠা, দরজায় দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করাসহ অসতর্কতার অনেক দৃষ্টান্ত আছে।

 

ট্রেনের ধাক্কায় বা কাটা পড়ে মারা গেলে হয় অপমৃত্যুর মামলা। তবে সব ঘটনাই দুর্ঘটনা নয়। বিভিন্ন ঘটনা তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

 

আরও পড়ুন: মুম্বাই ট্রেন বোমা হামলার মামলায় ১২ জনকে খালাস দিলেন আদালত

 

আছে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার ঘটনা। হত্যাকে দুর্ঘটনার রূপ দিতে ট্রেনের সামনে ধাক্কা দেয়া এমনকি অন্য কোথাও হত্যা করে রাতের আঁধারে মরদেহ রেললাইনে ফেলে রাখার ঘটনাও আছে। এ ধরনের বিষয় উঠে এসেছে গুম কমিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। রেল পুলিশ জানায়, ২০২৪ সালেই রেলে কাটা পড়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৫টি অপমৃত্যুর মামলা তদন্তে হত্যা মামলায় পরিণত হয়েছে।

 

সব মিলিয়ে কত মানুষ হতাহত হয়েছেন রেলের আঘাতে তার পরিসংখ্যান রয়েছে রেলপুলিশ সদর দফতরে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সর্বশেষ দশ বছরে সারা দেশে এভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ হাজার ২৩৭ জন। আহতের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। দশ বছরে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অন্তত ৬ হাজার ৩৫৬ জন।

 

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু রেলের একার পক্ষে এ ধরনের ঘটনা রোধ করার সুযোগ নেই। জনগণের সচেতনতাও প্রয়োজন।

 

আরও পড়ুন: খুলনায় গেটবিহীন রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু

 

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, 

মানুষের বসতবাড়ি বা এলাকার মধ্য দিয়ে রেল লাইন অতিক্রম করেছে। তাই মানুষজনও যেখানে সেখানে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। ফলে চাইলেও রেল কর্তৃপক্ষ সেখানে কিছু করতে পারে না। আমাদের রেলক্রসিংয়ের বাইরে রেলওয়ের অগোচরে অন্যন্য সড়ক নির্মাণকারী সংস্থা যত্রতত্র রাস্তা তৈরি করেছে। সেই কারণে এগুলো অরক্ষিত হয়েছে।    

 

তবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা তাদের বক্তব্য মানতে নারাজ। তারা বলছেন, রেলের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগই নেই। রেল করিডর কিভাবে ঝুঁকিমুক্ত রাখবে তার দায়িত্ব পুরোপুরি রেল কর্তৃপক্ষের। প্রযুক্তির ব্যবহার ও আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে যেকোনোভাবে কমাতে হবে হতাহতের সংখ্যা।

 

আরও পড়ুন: রেলপথকে পরিকল্পিতভাবে রেশনালাইজেশন করা হবে: শেখ মইনউদ্দিন

 

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘রেল দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান। তাদেরকে এই করিডোরটা সম্পূর্ণভাবে একসেস প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনো দিন কোনো করিডোরে এনফোর্সমেন্টের লোক দেখা যায় না। রেল করিডোরে সিসিটিভির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা উচিত। যারা অবৈধভাবে ব্যবহার করছে, তাদেরকে না আসার জন্য সেখানে কাজ করতে হবে।’  

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন