রূপগঞ্জে ঈদগাহ মাঠে ‘মেলা’ আয়োজন ঘিরে উত্তেজনা, সংঘর্ষের শঙ্কা

২ দিন আগে
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঈদগাহ মাঠে বাণিজ্যিক বিনোদনমূলক মেলার আয়োজনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এতে ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত করা হয়েছে এমন দাবি করছেন তারা। মেলা বন্ধ করা না হলে যে কোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, দীর্ঘদিনের ধর্মীয় পবিত্রতার প্রতীক দড়িকান্দি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে গান-বাজনা, আনন্দ মেলা ও অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছেন ইদগাহের মতো পবিত্র স্থানে মেলার আয়োজন করে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে।
 

ঈদগাহের পবিত্রতা রক্ষায় অবিলম্বে মেলা বন্ধ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে মেলার শুরুর দিন শুক্রবার (১ আগস্ট) জুমার নামাজের পর ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন শতাধিক মুসল্লি ও স্থানীয় এলাকাবাসী। দ্রুত মেলা বন্ধের জন্য তারা স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি জোড় দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়ায় মানুষের ক্ষোভ চরম পর্যায়ে গিয়েছে।
 

আরও পড়ুন: ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাসার, সম্পাদক মেহেদী

স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃক্ষমেলা নাম দিয়ে প্রচার চালানো হলেও গত ১ আগস্ট (শুক্রবার) থেকে ঈদগাহ মাঠে শুরু হয় তথাকথিত “রূপগঞ্জ কৃষি ও কুটির শিল্প মেলা। অথচ মেলার ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। কৃষি বা কুটির শিল্পের কোন চিহ্নই নেই। চোখে পড়ে শুধু বাহারি সাজসজ্জা, উচ্চ শব্দে গান-বাজনা, উচ্ছৃঙ্খল যুবক-যুবতী ও প্রেমিক যুগলের অবাধ বিচরণ এবং দোকানপাটে চলছে বাণিজ্যিক বিনোদনের নামে নানা অপকর্ম।
 

স্থানীয়রা বলেন, এমন পরিবেশ ঈদগাহের পবিত্রতাকে অপমান করার পাশাপাশি ইসলামি সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধকেও চরমভাবে ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।
 

মেলার প্রতিবাদে মানববন্ধনের পূর্বে স্থানীয় এক মৃত ব্যক্তির জানাজা অনুষ্ঠিত হয় পাশের মাদ্রাসা মাঠে। মেলার আয়োজনের কারণে ঈদগাহ দখল থাকায় মুসল্লিদের স্থান সংকট ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন উপস্থিত জনতা।


স্থানীয়দের অভিযোগ, এ মেলার জন্য কোনো বৈধ অনুমতি নেয়া হয় নি। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ধর্মীয় স্থানে অবৈধভাবে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলার পেছনে উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কনক ও তার অনুসারীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। অবিলম্বে মেলা বন্ধ করে ইদগাহের পবিত্রতা রক্ষা কর‍তে প্রশাসনের প্রতি দাবি করছেন তারা। অন্যথায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।


এ ব্যাপারে রূপগঞ্জের বাসিন্দা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু বলেন, ‘ঈদগাহে মেলার ব্যাপারে কনক নামে এক ব্যক্তি আমার কাছে এসেছিলো। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ঈদগাহ্ মাঠে মেলা হবে শুনে আমি কাউকে সমর্থন করিনি। মেলার সাথে আমি এবং আমার দলের কেউ জড়িত না। কেউ যদি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে করে থাকে তাহলে এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’

আরও পড়ুন: চা বিক্রির টাকায় চলে শুভ চন্দ্রের পাঠশালা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ‘মেলার অনুমতির জন্য কনক নামে এক ব্যক্তি আমার কাছে আবেদন নিয়ে এসেছিল। তবে যে কোনো মেলার অনুমতি ডিসি স্যার (জেলা প্রশাসক) দিয়ে থাকেন। আর কেউ অনুমতি দিতে পারে না। তাই আমি আবেদনটি ডিসি স্যারের (জেলা প্রশাসক) বরাবর পাঠিয়েছি। ডিসি স্যার তদন্ত করে তারপর অনুমতি দেন। অনুমতি না দিলে আমরা মেলা চলতে দিব না। তবে অনুমতির কোন কপি আমি এখন পর্যন্ত পাইনি।’


উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরও বলেন, ‘ঈদগাহ মাঠে মেলা বন্ধের জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুসল্লিরা আপত্তি করেছেন। তারা মানববন্ধন করেছেন বলে আমি শুনেছি। আরও কয়েকজন আমাকে বলেছেন। এ বিষয়ে আমি ডিসি স্যারের সাথে কথা বলব। আজকে রাতের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবো।’
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন