রিমান্ডের হুমকি দিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা আদায়ের অভিযোগ

৩ সপ্তাহ আগে
রিমান্ডের হুমকি দিয়ে আসামির পরিবার থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফ হোসেনের বিরুদ্ধে।

 রোববার (৮ ডিসেম্বর) সোনাগাজী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে করা এক মামলার সম্পৃক্ততার  অভিযোগে গ্রেফতার আরমান হোসেনকে রিমান্ডের হুমকি দিয়ে তার ভাই আরাফাত হোসেনের কাছ থেকে ৩২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন এসআই শরীফ।


জানা গেছে, সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভোয়াগ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দুদু মিয়ার ছেলে আরমান হোসেন ও তার পাশের বাড়ির একরামুল হকের মেয়ে জাহারা আক্তার জুথীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পারিবারিকভাবে জানাজানি হওয়ার পর তাদের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় প্রেমিক প্রেমিকা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় জুথির মা প্রথমে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রেমিক যুগলকে উদ্ধারে আরমানের বন্ধু আল আমিন ও সাখাওয়াতের সহযোগিতা চান সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ। 

আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ট্রাফিক পুলিশকে জুতাপেটা, সেই ২ নারী গ্রেফতার


শনিবার (৭ ডিসেম্বর)  তাদের নিয়ে ঢাকার পল্লবী থানা এলাকায় বন্ধু আরমানকে ডেকে নেন এসআই শরীফ। পরে তাকে সেখানে বেধড়ক মারধর করে প্রেমিক যুগলকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন।  এক পর্যায়ে বন্ধু আরমান তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে ব্যর্থ হলে তাকে গ্রেফতার করে সোনাগাজী থানায় নিয়ে আসা হয়।


এবিষয়ে আল আমিন নামে তাদের এক বন্ধু বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বন্ধু আরমান ও তার প্রমিকা  জুথির অবস্থান জানতে সহযোগিতা চেয়ে আমাকে ও শাখাওয়াতকে ঢাকায় নিয়ে যায়। আগে থেকে ঢাকায় অবস্থান করা আমাদের অন্য এক বন্ধু আরমানকেও সেখানে ডেকে আনেন এসআই শরীফ। পরে পল্লবী থানায় তার কাছে পালিয়ে যাওয়া বন্ধু আরমান ও তার প্রেমিকার সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু আরমান তাদের  অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্য না দিতে পারায়  এসআই শরীফ আরমানকে মারধর শুরু করে। চড়-থাপ্পড়, লাথি এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করে আহত করে  সোনাগাজী মডেল থানায় নিয়ে আসে। আমাকে ও আমার অন্য বন্ধুদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে ডেকে নিয়ে পরবর্তীতে আবার সোনাগাজী থানায় আমাদের আসামী করে মামলা হয়েছে জেনে অবাক হয়েছি।’


গ্রেফতার আরমানের বড় ভাই আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই ঢাকার একটি মোবাইল দোকানে চাকরি করত। পুলিশ সহায়তার কথা বলে ডেকে এনে আমার নিরপরাধ ভাইকে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। ঢাকা থেকে সোনাগাজী নিয়ে আসার পর আমার ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সোনাগাজী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসআই শরীফ আমার ভাইকে রিমান্ডে নেওয়ার হুমকি দিয়ে দুই দফায় আমার কাছ থেকে ৩২ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।’ 


তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার (৯ ডিসেম্বর) আমার ভাইকে কারাগারে দেখতে গিয়ে জেনেছি পুলিশের মারধরের প্রভাবের কারণে সে ঠিক মতো হাঁটতে পর্যন্ত পারছে না। আমি আমার নিরপরাধ ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’


সহায়তার কথা বলে ডেকে মামলা দিয়ে আরমানকে গ্রেফতার করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফ হোসেন বলেন, ‘সোনাগাজীর এএসপি (সার্কেল) তসলিম হুসাইনের নির্দেশে আমি সবকিছু করেছি। আমি ঢাকা থেকে তাকে ৭ ডিসেম্বর নিয়ে এসেছিলাম। পরদিন ৮ ডিসেম্বর সোনাগাজীর সার্কেল এএসপির নির্দেশে মামলা নিয়েছে থানার  ওসি।’


রিমান্ডের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি।’


তবে সোনাগাজীর এএসপি (সার্কেল) তসলিম হুসাইনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলার সহায়তার জন্য ডেকে এনে গ্রেফতারের বিষয়টি সঠিক না। মূলত সোনাগাজী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে করা এক মামলার সম্পৃক্ততার অভিযোগে আরমান হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই জুটিকে বাসায় আশ্রয় দিয়েছে বলে স্বীকার করে আরমান। ৫ দিন সেখানে থাকার পর সেখান থেকে অন্যত্র চলে যায় বলে পুলিশকে জানায় সে। সেখানে থাকা অবস্থায় ছেলে মেয়ে উভয়েই শারীরিক সম্পর্ক জড়িয়েছে বলেও পুলিশকে নিশ্চিত করে আরমান। আর এজহার মতে-ভিকটিম মেয়েটির বয়স ১৪ বছর। তাই প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদেরকে সহায়তা করাটা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ বলেই তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’

আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ট্রাফিক পুলিশকে জুতা দিয়ে পেটালেন দুই নারী


এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বায়েজিদ আকন বলেন, ‘আরমান হোসেন ও জাহারা আক্তার জুথিকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে মারধরের বিষয়টি সত্য নয়। ঢাকা থেকে আনার পর মারধরের বিষয়টি আমার চোখে পড়েনি।
রিমান্ডের নামে হুমকি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার অর্থ আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ অবগত করেনি। আসামি পক্ষের লোকজন নিজেদের বাঁচাতে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে অনেক কথা বলে থাকে। টাকা আদায়ের বিষয়টিও সেরকম মনে হচ্ছে। তারপরও এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন