রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়া আসাদ কি বিচারের মুখোমুখি হবেন?

৪ সপ্তাহ আগে
গত রোববার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। এর মধ্যদিয়ে যেমন তার দুই দশকের রাজত্ব শেষ হয়েছে; তেমনি আসাদের পরিবারের ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাজতন্ত্রেরও অবসান হয়েছে। সেদিন বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশের পরই অজ্ঞাত স্থানে চলে যান আসাদ। পরে গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, রাশিয়ায় পালিয়ে গেছেন স্বৈরাচার আসাদ। কিন্তু তিনি রাশিয়ায় কেন পালালেন? তাকে কী বিচারের মুখোমুখি করা হবে?

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে বিস্তারিত। 


প্রতিবেদনে বলা হয়,  আসাদ ২০০০ সালে ক্ষমতা গ্রহণের আগে, তার প্রয়াত বাবা হাফেজ আল-আসদ ৩ দশক ধরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

 

আসাদকে হটানো ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে। এখন ক্ষমতাচ্যুত আসাদ, তার স্ত্রী এবং তাদের তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

 

আরও পড়ুন:অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করাই এখন সিরিয়ার বড় চ্যালেঞ্জ

 

তারা এখন রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। যেখানে তাদের ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ দেয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের সামনে কী অপেক্ষা করছে?


আসাদ কেন রাশিয়ায় পালিয়ে গেলেন?

২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় রাশিয়া আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।

 

২০১৫ সালে রাশিয়া আসাদের সমর্থনে একটি বিমান অভিযান শুরু করেছিল যা আসাদ সরকারের পক্ষে কার্যকর ফল এনেছে। 

 

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক একটি পর্যবেক্ষণ গ্রুপ জানিয়েছে, সিরিয়ায় ৯ বছরে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ৮ হাজার ৭০০ বেসামরিক নাগরিকসহ ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

 

তবে, ইউক্রেনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর নভেম্বরের শেষের দিকে আসাদ সরকারকে উৎখাত করতে বিদ্রোহীদের শুরু হওয়া অভিযান থামাতে রাশিয়া সহায়তা করেনি।

 

বিদ্রোহী বাহিনী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, আসাদ ও তার পরিবার মস্কোতে পৌঁছেছেন এবং তাদের মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

 

আরও পড়ুন:বিদ্রোহীদের ঘোষণা / আসাদের নিরাপত্তা বাহিনী বিলুপ্ত হবে, বন্ধ হবে কুখ্যাত কারাগারগুলো

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, আসাদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক সম্পর্কে সবাই জানে। বিশেষ করে মস্কোর কাছে তার একাধিক প্রমাণ আছে।

 

ফিনান্সিয়াল টাইমসের ২০১৯ সালের তদন্তে দেখা গেছে,  আসাদের পরিবার রাশিয়ার রাজধানীতে কমপক্ষে ১৮টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিল। গৃহযুদ্ধের সময় সিরিয়া থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে পাচার করেছে।


আসাদের স্ত্রী এবং তাদের সন্তান কারা?

 

বাশার আল-আসাদ দ্বৈত ব্রিটিশ-সিরীয় নাগরিক আসমাকে বিয়ে করেন। যিনি পশ্চিম লন্ডনে সিরীয় পিতামাতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন।


তিনি লন্ডনে স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। এরপর বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

 

আসাদ যখন সিরিয়ার ক্ষমতায় বসেন তখন আসমা পাকাপাকিভাবে সেখানে যান এবং আসাদকে বিয়ে করেন।


লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের ভিজিটিং ফেলো ড. নেসরিন আলরেফাই বিবিসি নিউজকে বলেছেন, আসমার ব্রিটিশ পাসপোর্ট থাকায় তিনি রাশিয়ার পরিবর্তে যুক্তরাজ্যে ফিরে যেতে পারেন।

 

আসাদ-আসমা দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে: হাফেজ, (পিএইচডির ছাত্র), জেইন এবং করিম।


মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদ পরিবারের মোট সম্পদ ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। যদিও বলা হয়েছে যে তাদের সম্পদের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ তাদের সম্পদ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে। তাদের নামে-বেনামে অসংখ্য অ্যাকাউন্ট রয়েছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার বড় বড় অর্থনৈতিক কুশীলবদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন বাশার এবং আসমা। অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজে তাদের কোম্পানিগুলো ব্যবহার করতেন আসাদ-আসমা দম্পতি।

 

আসাদ কি বিচারের মুখোমুখি হবেন?


আসাদ শাসনের পতনের পর, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছিলেন, আসাদের শাসনের সময় সিরীয়দেরকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মম শিকার এবং অবর্ণনীয় মানবিক দুর্ভোগের মুখে ফেলা হয়েছে।


এর মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক অস্ত্রের আক্রমণ, ব্যারেল বোমা হামলা। সেই সঙ্গে হত্যা, নির্যাতন, বলপূর্বক গুম এবং নির্বাসন; যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য।


অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আসাদ সরকারের সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।


গত মঙ্গলবার, সিরিয়ার ইসলামপন্থি বিদ্রোহী নেতা বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা রাজনৈতিক বন্দিদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে।


ফ্রান্সে সার্বজনীন বিচারব্যবস্থার আইনি ধারণার অধীনে ২০১৩ সালে সিরিয়ায় মারাত্মক রাসায়নিক হামলার সঙ্গে জড়িত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আসাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী বিচারকরা তার গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছিলেন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন