রাবির রেজিস্ট্রার-আম্মারের বাগ্‌বিতণ্ডার ভিডিও ভাইরাল, আসলে কী ঘটেছিল?

২ সপ্তাহ আগে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ ও রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাউদ্দিন আম্মারের মধ্যে উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে রেজিস্ট্রার দফতরে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, সালাউদ্দিন আম্মার রেজিস্ট্রারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি স্যার ভিতরে আসব না?’ তখন রেজিস্ট্রার বলেন, ‘তোমাকে আমি বাইরে ১০ মিনিট ওয়েট করতে বলেছি।’ তারপর আম্মার বলেন, ‘আপনি স্যার চিঠি (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি অপসারণের চিঠি) আটকায় রাখছেন।’ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘এই বেয়াদব ছেলে, কীসের চিঠি আটকায় রাখছি আমি?’ তখন আম্মার বলেন, ‘বেয়াদব তো আমি। ডেফিনেটলি বেয়াদব।’

 

রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমার সঙ্গে বেয়াদবি কেন? তুমি কে ওই ডিপার্টমেন্টের? তখন সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমি কে মানে? আমি রাকসুর নির্বাচিত জিএস।’

 

সালাউদ্দিন আম্মারের পিছে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘তোমরা কারা?’, তারা উত্তরে বলেন, ‘আমরা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী।’ তখন তিনি বলেন, ‘তোমরা আসো।’ তখন সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘ওরা কথা বলবে! আমিও তো শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি।’ সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার বলেন, তোমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাকে প্রতিটা দিনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে নাকি।’

 

আরও পড়ুন: হিজাব নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের প্রতিবাদে ‘ইসলামি লেবাসে’ ক্লাস নিলেন রাবি শিক্ষক

 

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফিসারিজ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মণ্ডলকে দেখিয়ে আম্মারকে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘ডিন স্যার বাইরে ওয়েট করতেছিল। তুমি এর ভেতরে ঢুকেছ কেন?

 

আম্মার বলেন, ‘আমি ঢুকব না? আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমি কেন ঢুকতে পারব না?’ রেজিস্ট্রার আম্মারকে বলেন, ‘গেট আউট? আম্মার বলেন, ‘কেন গেট আউট।’ রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘তুমি সবসময় মিথ্যাচার করো। এখানে বিএনপির কেউ নাই। তারা এনসিপির নেতাকর্মী।’ তখন আম্মার বলেন, ‘আপনার সচিবকে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিটিং চলছে।’

 

রেজিস্ট্রার বলেন, ‘গেট আউট, আমার অফিসে আমার পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হবে। এনারা (এনসিপির নেতাকর্মীরা) ১৫ দিন আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখছে।’ আম্মার বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীর অধিকার আগে, এটা ইমার্জেন্সি। আমাকে এখানে আসতে হবে।’ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘অবশ্যই ইমার্জেন্সি। তোমাকে ওখানে বসতে (ওয়েট) বলেছি।’ তখন এনসিপির এক নেতা এসে আম্মারকে বলেন, ‘আমরা বিএনপি'র কেউ না। আমরা এনসিপির নেতাকর্মী।’

 

ঘটনার পর নিজের ফেসবুক পেজে বিস্তারিত লিখে জিএস সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অপসারণের আন্দোলন চলছে প্রায় ২৩ দিন। আমি ভিসি মহোদয়কে বারবার অনুরোধ করেছি বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য। অবশেষে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) চেয়ারম্যান অপসারণের কাগজে স্বাক্ষর হয়, কিন্তু রেজিস্ট্রার দফতরে তা আটকে রাখা হয় রোববার পর্যন্ত।’

 

তিনি আরও লেখেন, ‘রেজিস্ট্রার স্যারের দফতরে যখন যাই, তখন আমাকে জানানো হয় স্যার নাকি মহানগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে প্রোগ্রামে আছেন। এটা শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। আমি স্যারকে অনুরোধ করি বিষয়টি জরুরি, কিন্তু উনি পরে আসতে বলেন। বাধ্য হয়ে আমি নিজেই ঢুকে যাই, তখন স্যার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং চড়াও হন। ঘটনার কিছু অংশ ভিডিওতে ধারণ করা হয়, যা পরে কেটে যায়।’

 

আরও পড়ুন: রাকসুর সাধারণ সম্পাদক কে এই আম্মার

 

আম্মারের দাবি, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু না হলেও, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক এবং সিনেট সদস্য। এভাবে আমার পদ মর্যাদাকে অসম্মান করা হয়েছে।’

 

 

অন্যদিকে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ বলেন, ‘আমার দফতরে সবাই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েই আসেন। এনসিপি নেতারা এক সপ্তাহ আগে থেকেই দেখা করার কথা জানিয়েছিলেন, আজ তারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। তখন কয়েকজন শিক্ষকও ছিলেন। ঠিক তখনই আম্মার এসে বিনা অনুমতিতে রুমে ঢুকে পড়ে।’

 

তিনি আরও বলেন, `আমি তাকে বলি, তুমি বিনা অনুমতিতে আমার রুমে কেন ঢুকেছ?’ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের বিষয়ে এখন প্রশাসনেরই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে, শিক্ষার্থীদের আর কিছু করার নেই। কিন্তু সে সেখানে গিয়ে মিথ্যাচার করে বলেছে আমি বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলাম। এটা তার স্বভাবসুলভ আচরণ।'

 

আরও পড়ুন: হিজাব-নিকাব পরিধানে স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে রাবি প্রশাসন

 

তবে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের নয়; বরং এনসিপির নেতাকর্মীদের সৌজন্য সাক্ষাৎ চলছিল বলে জানান এনসিপির রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক মোবাশ্বের রাজ। তিনি বলেন, কাকতালীয়ভাবে, খুবই অপ্রত্যাশিত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে পড়ে গেছি আজকে। সালাহউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্টার স্যারের সঙ্গে উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডার সময় ওখানে বিএনপির কেউ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতারা ছিল। আমরা ওখানে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রেজিস্ট্রার স্যারের পিএস সম্ভবত আমাদের বিএনপির নেতাকর্মী ভেবে তাদের ইনফর্ম করে। এখান থেকে ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয়।

 

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রায় ২৩ দিন ধরে আন্দোলন করছে। এ সময়ে বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকে।

 

এদিকে, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ থেকে চেয়ারম্যান প্রফেসর এনামুল হককে অপসারণ করা হয়েছে। তাকে সাইকোলজি বিভাগে আগের পদে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সহকারী অধ্যাপক তরুন হাসানকে। রোববার প্রশাসন থেকে এই আদেশ জারি করা হয়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন