বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্নাতক পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত পোষ্য কোটার সুবিধা গত বছর নতুন করে শর্তসাপেক্ষে চালু রাখা হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থী ও কর্মচারী-পক্ষের বিরোধিতার প্রেক্ষিতে বিষয়টি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদারের বরাতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের অন্যান্য সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাবিতেও এ সুবিধা চালু ছিল। তবে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের একাংশ এটিকে বৈষম্যমূলক দাবি করে বাতিলের দাবি তোলে। পরে ভর্তি কমিটি সিদ্ধান্ত দেয়, কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১% কোটা থাকবে, কিন্তু শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা কোনো কোটা থাকবে না।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও প্রশাসনের উদ্যোগ:
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও অনশন কর্মসূচির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাধিকবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। কখনো কোটা কমিয়ে আনা, কখনো আবার স্থগিত রাখা হয়। এক পর্যায়ে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি কমিটি কেবল কর্মচারীদের জন্য ১% কোটা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে এ সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আন্দোলনে নামেন। তারা যুক্তি দেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন এ ধরনের সুবিধা বিদ্যমান, তখন শুধু রাজশাহীতে তা বাতিল করা বৈষম্যমূলক। এ প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)কে সভাপতি করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কমিটি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর দশটি শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বহাল রাখার সুপারিশ করে। এর মধ্যে ছিল— কেবলমাত্র ঔরসজাত সন্তান ভর্তির সুযোগ পাবে, ন্যূনতম পাস নম্বর থাকতে হবে, কোনো বিভাগে দুই জনের বেশি ভর্তি করা যাবে না, নিজের বিভাগের কোটা ব্যবহার করা যাবে না, আবাসিক হলে সিট পাওয়া যাবে না ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: রাবি উপাচার্যের আশ্বাসে শাটডাউন স্থগিত জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের
উত্তেজনা ও সহিংসতার ঘটনা:
প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় আন্দোলনে নামে। ২০ সেপ্টেম্বর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)কে জোর করে আটকে রাখার ঘটনা ঘটে। একই রাতে কয়েকশ শিক্ষার্থী উপাচার্য ভবনে অবস্থান নিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। শেষ পর্যন্ত উপাচার্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা দেন।
পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এবং একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়।
পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা:
২০ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করেন, ফলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। তবে পরে প্রশাসনের আহ্বানে তারা কর্মসূচি স্থগিত করে। শিক্ষকরাও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন বলে জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিটি পর্যায়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট নির্বাচন সামনে রেখে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়।
]]>