রাতের আঁধারে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা সংগ্রহ, বড় ক্ষতির মুখোমুখি প্রাণ-প্রকৃতি

৩ সপ্তাহ আগে
রাতের আঁধারে ‎রংপুরের বিভিন্ন স্থানে গোপনে পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা পরিবেশ ও জনজীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। তীব্র বিষাক্ত ধোঁয়া ও গন্ধে গবাদিপশু ও মানুষের স্বাস্থ্যও বিপন্ন হচ্ছে। তবে তদারকির দায়িত্বে থাকা পরিবেশ অধিদফতরের কেউ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নারাজ।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছাসহ জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ব‍্যাটারি পোড়ানোর জন‍্য সবকিছুই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। গভীর রাতে শুরু হবে পোড়ানোর কার্যক্রম।

 

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এসব কার্যক্রম বন্ধে একাধিকবার মানববন্ধন ও বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি। বদরগঞ্জ কুতুবপুর এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, ‘অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল মিলছে না। আমার গরু যে খাদ্য খেয়ে মারা গেছে, সেই খাদ্যের মধ্যে সিসার চিহ্ন পাওয়া গেছে। খুঁজতে খুঁজতে পাশের মিঠাপুকুর উপজেলায় ব্যাটারি পোড়ানোর স্থানটি খুঁজে পেয়েছি। গত মাসে গর্ভবতী গরু মারা গেছে। আমরা এর বিচার চাই।’‎

 

মিঠাপুকুরের আরেক বাসিন্দা আক্কাস মিয়া বলেন, ‘রাত তিনটার পর আগুন দিয়ে ব্যাটারি পোড়ানো হয়। ধোঁয়ার কারণে আমাদের ক্ষেত, খামার, আমবাগান সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গরু-বাছুর, হাঁস-মুরগিও মারা যাচ্ছে।’

 

আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবলে উপকূল, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জীবিকার সংকটে বাসিন্দারা

 

বদরগঞ্জের মাবিয়া বানু অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, ‘আমার আট মাসের গাভি মারা গেছে। কষ্ট করে গরুর দুধ বিক্রি করে বাচ্চাদের মানুষ করছি। বড় দুইটা গাভিও অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।’

 

তবে এসব বন্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি পরিবেশ অধিদফতর। রংপুর পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক নুর আলম বলেন, ‘আপনি আমার অফিসে আসছেন তার মানে আপনাকে সাক্ষাৎকার দিতে হবে এর কোনো মানে নেই। কোথায় এসব কাজ করছে আমাকে তথ্য দেন। আপনি গিয়ে নিউজ করে আসছেন তাতে আমার কি হয়েছে? আমি ক‍্যামেরার সামনে কোনো কথা বলব না, এটা আমার ইচ্ছা। আপনি আসলেন, মন চাইলো সাক্ষাৎকার চাইলেন; আর আমি দিয়ে দিলাম? আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন। আমি কোনো কথা বলবো না।’
 

‎এ বিষয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সংগঠক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, মুনাফালোভীদের লালসার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা সংগ্রহের কারণে একদিকে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে, অন্যদিকে মানুষ ও প্রাণী কুলও ভয়াবহ ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে।
 

‎তিনি আরও বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের কাজে অবহেলার কারণে পরিবেশ বিনাসী এমন ঘৃণিত কর্মকাণ্ড চলছে। পরিবেশ-প্রকৃতি আক্রান্ত হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতার কারণ বোধগম্য নয়। অনতিবিলম্বে এহেন তৎপরতা বন্ধে পরিবেশ অধিদফতরের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন