রাজশাহীর ১৩ পৌরসভায় নেই ভাগাড়, নদী-ড্রেনই এখন বর্জ্যের গন্তব্য

১ সপ্তাহে আগে
রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৩টিতেই নেই নির্ধারিত ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশন। ফলে এসব পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে, নদী-নালা, ড্রেন ও পুকুরে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ছড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি।

স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা প্রতিটি পৌরসভার অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলেও রাজশাহীর অধিকাংশ পৌরসভায় এ বিষয়ে চরম অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই জেলাটির কোনো পৌরসভার।


চারঘাট পৌরসভা বাদে অন্য কোথাও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ নেই। যদিও কাটাখালী, তাহেরপুর, বাঘা ও গোদাগাড়ী পৌরসভায় প্রায় ৬ কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প চলমান, কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণের জমিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় দীর্ঘ সময়েও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কোটি টাকায় কেনা ডাস্টবিন, ভ্যান, ভ্যাকুট্যাগসহ পরিবহন ব্যবহারে না আসায় খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে।


নওহাটা পৌরসভায় নেই কোনো ভাগাড় বা নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা। ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বারনই নদীতে। একই নদীতে ফেলা হচ্ছে তাহেরপুর ও বাগমারা পৌরসভার বর্জ্যও। দুর্গাপুর পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হয় হোজা নদীতে। পদ্মার বিভিন্ন স্থানে ফেলা হয় গোদাগাড়ী পৌরসভার বর্জ্য।


কাটাখালী পৌরসভার বর্জ্য সিটি হাটের ভাগাড়ে ফেলা হলেও বেশিরভাগ ময়লা কাটাখালী বাজার এলাকার ড্রেনেই ফেলা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। এতে ড্রেনজট ও জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।


বাঘা পৌরসভার একটি নির্ধারিত জায়গা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে না। বরং বর্জ্য ফেলা হচ্ছে শাহী মসজিদের পুকুরে। স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, 'পুকুরে বর্জ্য ফেলার কারণে দুর্গন্ধ হচ্ছে, গোসল করলে চর্মরোগ কিংবা ডায়েরিয়া হতে পারে।'


রাজশাহী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বলেন, এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে বিভিন্ন ধরনের দূষণ তৈরি হচ্ছে। এতে নানা রোগ দেখা দিচ্ছে এবং পরিবেশগত সমস্যাও বাড়ছে।


আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জ সিটির সড়ক যেন ময়লার ভাগাড়!


বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জানান, চর্মরোগ ছাড়াও ডায়েরিয়া, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে বর্জ্য থেকে সৃষ্টি বায়ু দূষণে।


রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ বলেন, পচনশীল বর্জ্য থেকে বিষাক্ত গ্যাস ও ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো ভবিষ্যতে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।


৬ কোটি টাকার প্রকল্প থাকলেও কাটাখালী পৌরসভার প্রশাসক জাহিদ হাসান বলেন, মানবসৃষ্ট বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে এখনও আমরা কোনো জায়গা পাইনি। উপযুক্ত জায়গা খোঁজা হচ্ছে।


উল্লেখ্য, প্রতিটি পৌরসভা বছরে গড়ে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয় করছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাবে সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন