গত ১৪ জুন রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ ও ১৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থলে র্যাবের পোশাকে নগদের এক পরিবেশকের দুই কর্মীকে গতিরোধের চেষ্টা করা হয়। র্যাব দেখেই দৌড়ে পালাতে গেলে তাদের ধরে ফেলে সঙ্গে থাকা এক কোটি ৮ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। প্রকাশ্যে সবার সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও র্যাব ভেবে এগিয়ে যাননি কেউ।
পরে তদন্ত নেমে ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় নগদ ২২ লাখ টাকা। জানা যায়, চাকরিচ্যুত পুলিশ ও সেনা সদস্যের নেতৃত্বে হয় এ ডাকাতি। ভুক্তভোগী জানান, ডাকাতরা তার ব্যবসার সব পুঁজি নিয়ে গেছে। দ্রুত লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধারের দাবি তার।
এছাড়া গত মার্চে ধানমন্ডিতে যৌথ বাহিনী সেজে একটি বাসা থেকে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে ডাকাতরা। মামলা সূত্রে জানা যায়, জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান ১১ সদস্য। ৫ জন গ্রেফতার হলেও বাকিরা পলাতক। উদ্ধার করা যায়নি লুণ্ঠিত মালামাল।
আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি
এর আগে গত জানুয়ারিতে রাজধানীর গুলশানে একটি বাসা থেকে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ৬০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৩৪ লাখ টাকা লুট করা হয়। একই মাসে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের উল্টো পাশে এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর এক কোটি টাকা লুট করা হয়। এ দুই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও গ্রেফতার হয়েছে একজন। উদ্ধার হয়নি লুণ্ঠিত মালামাল।
গত বছরের অক্টোবরেও মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনী সেজে একটি বাসা থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৭৫ লাখ টাকা লুট করা হয়। এ ঘটনায় চাকরিচ্যুত এক লেফটেন্যান্ট কর্নেলসহ ১১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের নাম আসলেও গ্রেফতার হয়েছেন ৫। উদ্ধার হয়েছে মাত্র ১৭ লাখ টাকা। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত থাকায় কথা বলতেও ভয় পান ভুক্তোভোগীরা।
ধানমন্ডি থানায় ডাকাতি মামলার বাদী তৌহিদুল ইসলাম লিমন সময় সংবাদকে বলেন,
সাধারণ আসামি না, এখানে পুলিশ, ডিজিএফআই ও আর্মির লোকও আছে। তাই মামলা করে এখন আতঙ্কে আছি, টাকা-পয়সা তো পরের কথা।
ডাকাতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়ালে আসামি গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে কঠোর হওয়ার পরামর্শ অপরাধ বিশ্লেষকের।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় পাঁচ মাসে ২৭টি হত্যাকাণ্ড, আতঙ্কে জনজীবন
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন,
অপরাধীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে হবে। সে যেখানেই চাকরি করুক, সেখানে এখনও কোনো সুযোগ-সুবিধা চলমান থাকলে, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া এবং অবসরকালীন পাওয়া সব সুবিধা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়ে যাওয়া উচিত।
গত ৮ মাসে রাজধানীতে ডাকাতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩৬ সদস্য ও সোর্সের নাম এসেছে। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ১৫ জন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দাবি, কেউ অপরাধে জড়ালে নেয়া হচ্ছে আইনি ব্যবস্থা।
ডিএমপির মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন,
কয়েকজনকে গ্রেফতার করেই আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। যারা এসব ঘটনা ঘটানোর পর গা ঢাকা দিয়েছেন, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন: মব সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে: ডিএমপি কমিশনার
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কেউ অভিযানে আসলে ৯৯৯ বা নিকটস্থ থানায় ফোন করে নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ ডিএমপির।
]]>