আর গ্রীষ্মে এসে যুক্ত হয় ব্যবহার্য পানির সংকটও।তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ আশ্বাস দিলেও সংকট সমাধানে দৃশ্যামান কোনো আগ্রগতি দেখা যায়নি।
সরেজমিনে রাঙ্গামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম নাড়াইছড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ি ছড়া শুকিয়ে যাওয়ার খাবার পানিসহ নিত্য ব্যবহার্য পানির তীব্র কষ্টে ভুগছে এই গ্রামের এই গ্রামের ১৫০ পরিবার। ছড়ার তলদেশ গর্ত করে বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশের বেড়া দিয়ে সঞ্চিত করা হচ্ছে পানি। সেখান থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে পানীয় জল। সেখেনেই চলছে ধোয়া পাকলার কাজ। বাদ যায়নি গোসোলও। ফলে এই পানি হয়। পড়ছে আরো বেশি অনিরাপদ।
এমন চিত্র শুধু রাঙ্গামাটি সদরেই নয় জেলার কাউখালী, লংগদু, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ির উপজেলার দুর্গম গ্রামগুলোতে মিল এমন চিত্র।
আরও পড়ুন: গহীন পাহাড়ে সাঁড়াশি অভিযান, ‘সন্ত্রাসীদের’ নিরাপদ আশ্রয়ে মিলল অস্ত্র
গ্রামের বাসিন্দা সুবিমল চাকমা বলেন, ‘শীতের শেষ দিক থেকেই আমাদের পানির কষ্ট শুরু হয়। এখানে ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় আরও বেশি কষ্টে পড়েছি। এক কলসি পানির জন্য নারীদের দুই তিন কিলোমিটা পথ হাঁটতে হয়। আমাদের এই কষ্ট দেখার কেউ নেই।’
আরেক বাসিন্দা জোনাকি চাকমা বলেন, ‘সারাদিন জমিতে কাজ করে আসার পর আমরা ঠিক মতো গোসল পর্যন্ত করতে পারি না। কুয়ায় যে পানি পাই সেগুলো দিয়ে চলতে হয়। গ্রামে সরকার কোনো টিউবওয়েল, রিং ওয়েল দেয়নি। বহুবার চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে গেছি কোনো কাজ হয়নি। তাই পানির জন্য আমাদের খুব কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।’
১০৯ নং সাপছড়ি মৌজার নাড়াইছড়ি গ্রামের কার্বারি (গ্রাম প্রধান) খুলমোহন কার্বারি বলেন, ‘প্রতিবছর গ্রীষ্মের সময় পানির জন্য পুরো গ্রাম হাহাকার করে। তবুও ছড়া গর্ত করে কিছু পানি পাই। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে আমাদের এই সংকট আরও বেড়ে যায়। পাহাড়ি ঢলে পানি ঘোলা হয়ে যায়। সেই পানিই পান করতে হয়। এতে অনেকই অসুস্থ হয়ে যায়। আমি সরকারে কাজে দাবি করছি, আমাদের পানির সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। প্রতি বছর কোনা কোন সাংবাদিক এসে রিপোর্ট করেন, কিন্তু আমাদের সমস্যার কোনো সমাধান হয় না।’
আরও পড়ুন: নেত্রকোনার পাহাড়াঞ্চলে পানির কষ্ট দূর হবে কবে?
বাঘাইছড়ির রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘কাজ শেষে বাসায় ভাত খেতে এসেছি। বউ বললো পানি নেই। ৩/৪ টি কুয়া ও ঝর্নায় গেলাম সেগুলোও শুকিয়ে গেছে। পানির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছি।’
রাঙ্গামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া বলেন, ‘এই মুহূর্তে ৫৮.৪৭ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কের আাওতায় এসেছে। বাকি যেটুকু আওতায় আসেনি সেখানেও পানির ব্যবস্থা করার জন্য আমরা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তারমধ্যে আমাদের কমিউনিটি বেইজড পাইপ নেটওয়ার্ক সাপ্লাই স্কিম, রুরাল পাইপ নেটওয়ার্ক সাপ্লাই স্কিমসহ বিভিন্ন স্কিমের মাধ্যমে আমাদের কাজ বাস্তবায়ন করে নিয়ে যাচ্ছি। এগুলোর কাজ শেষ হলে আশা করি সমস্যা সমাধান হবে।’