চলতি বছর প্রথমার্ধে গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছিল জাতিসংঘ। এ জন্য মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশে ‘করিডর’ দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছিল অভিভাবক সংস্থাটি।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্তসাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য করিডর দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে বিষয়টিকে অস্পষ্ট হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে মানবিক সহায়তা পাঠাতে কেন করিডরের প্রয়োজন হচ্ছে প্রশ্ন তাদের।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টা হচ্ছে, আমি আমার জিনিস থেকে বা জাতিসংঘের যে সহায়তা সেটা আমি পৌঁছে দিচ্ছি কিনা আরাকানে! আমি তো আরাকান বর্ডার পর্যন্ত পৌঁছে দিতেই পারি। কিন্তু আমার নিরাপত্তা বাহিনী কি আরাকানে ঢুকবে কিনা, সে বিষয়ে যতটা পরিষ্কার করা দরকার ততটা স্পষ্ট হয়নি এখনও।’
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য যেখানে আর্থিক সহায়তা কমিয়ে দিচ্ছে জাতিসংঘ, সেখানে হঠাৎ করে রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়কে ঢাকার সর্তকতার সঙ্গে পর্যালোচনা করার পরামর্শ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের।
আরও পড়ুন: কেন সমাধান হচ্ছে না রোহিঙ্গা সংকট?
প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের পরাশক্তিধর দেশগুলো মানবিক সহায়তায় করিডর দেয়াকে কীভাবে দেখছেন এ ব্যাপারেও সর্তক হওয়ার তাগিদ তাদের।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এখান থেকে যদি জাতিসংঘ যেতে চায় এবং সেখানে আরাকান আর্মি যদি রাজি থাকে তাহলে আমাদের এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কি জড়িত থাকবে কি না, জাতিসংঘ কর্মীদের নিরাপত্তা দেয়ার ব্যাপারে। ওই নিরাপত্তা কে দেবে, সে জায়গায় জটিলতা।’
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য আরাকান আর্মিসহ রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
২০১২ সালের জাতিগত দাঙ্গা আর ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার মুখে উখিয়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এই শরণার্থীদের ফেরাতে ২০১৭ সালে আবারও নেইপিদোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে ঢাকা। তবে নতুন চুক্তির আওতায় ৮ বছরে ফেরেনি একজন রোহিঙ্গাও। এমনকি ১৯৯২-এর চুক্তির ৩৩ বছরেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন।
বর্তমানে কক্সবাজার ও ভাসানচরে ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৩ লাখ। প্রতি বছর জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু।
]]>