রাজধানীর হাতিরঝিল রিং রোডের কুনিপাড়া অংশ গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ। এসব স্থানে মাঝেমাঝেই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ পথে চলাচলকারীরা বলছেন, বিভিন্ন জায়গায় গর্ত রয়েছে। প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। বৃষ্টির সময় বেশি বিপাকে পড়তে হয়। এছাড়া শুরুর দিকে ঝিলের সেতুগুলোতে থাকা ঝলমলে আলোকসজ্জার সবটাই এখন অতীত। যদিও প্রতি বছর ঝিলটি রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় সাত থেকে আট কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে সরকার।
গত কয়েক বছরের নথি বলছে, বরাদ্দকৃত অর্থের বড় একটি অংশই ব্যয় হয় বিদ্যুৎ খাতে। যদিও বেশিরভাগ সড়কবাতিই পড়ে আছে বিকল হয়ে, যার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
এ তো গেল সড়কের কথা। ভরা বর্ষাতেও ঝিলটির পানির দশা যাচ্ছেতাই। পানি পরিষ্কার রাখতে দুই বছরের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেহজাবিন এন্টারপ্রাইজকে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো দিনকে দিন এই ঝিলের পানিতে দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। গেল এক যুগ ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল দশার ক্ষত ঝিলের প্রায় পুরোটা জুড়ে।
আরও পড়ুন: বাড়ছে মব সহিংসতা, মোবাইল অপারেটরদের সহযোগিতা চায় সরকার
এদিকে চক্রাকার বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় এখন স্বাভাবিক হিসেবেই নিয়েছেন এ পথের যাত্রীরা। নিয়ম অনুযায়ী রাজধানীতে কিলো প্রতি ভাড়া ২ টাকা ৪২ পয়সা। কিন্তু হাতিরঝিলের বাসকে আখ্যায়িত করা হয় পর্যটন বাস হিসেবে, যে কারণে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুন ভাড়া। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এখানে নিরব। আর রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম জানেনই না এই বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি। সার্বিক পরিস্থিতি শুনে ৩ মাস আগে তিনি দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যানের আশ্বাস পেয়ে ৩ মাস অপেক্ষার পর সময় সংবাদের প্রতিনিধি আবারও ঘুরে দেখেন হাতিরঝিল। অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন যে হয়নি তার প্রমাণ পাওয়া যায়। জানা যায়, অগ্রগতি বলতে জুন মাসে হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ আর মেরামত কাজের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণে কেবলই একটি টেকনিক্যাল টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজউক।
এর পুরো দায় রাজউকের উল্লেখ করে নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলছেন, দায়িত্বে অবহেলার শাস্তির সংস্কৃতি তৈরি হলে এমন পরিস্তিতি পুনরাবৃত্তি হবে না।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে বসবাসের অনুপযোগী আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো, নেই মেরামতের উদ্যোগ
তিনি বলেন,
হাতিরঝিল নিয়ে আমাদের যে মূল অবজেকটিভ ছিল, সেটা থেকে দূরে সরে এসেছে। কর্মকর্তারা কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ময়লা-আবর্জনা বা শিল্পবর্জ্য ফেলার যেসব অবৈধ লাইন আছে, সবগুলো সরিয়ে হাতিরঝিলের নান্দনিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
রাজধানীতে জল ও সবুজের যে মেলবন্ধন তা এখন পর্যন্ত মেলে হাতিরঝিলেই। তাই সচেতন নাগরিকদের প্রত্যাশা, প্রতিশ্রুত রূপে টিকে থাক ৩০২ একর আয়তনের এই প্রকল্প।
]]>