রোববার (২০ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে একুশে টেলিভিশন ও দৈনিক সংবাদের সিনিয়র রিপোর্টার লিয়াকত আলী বাদলকে কাচারী বাজার থেকে তুলে নিয়ে যায় রকি ও তাঁর লোকজন। ঘটনা জানাজানি হলে সিটি করপোরেশন ছুটে যান রংপুরের কর্মরত সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতারা।
নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল জানান, রংপুর সিটি করপোরেশনে ১৫ বছর ধরে অটোরিকশার লাইসেন্স বন্ধ রয়েছে। বর্তমান প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে ৫ কোটি টাকার বাণিজ্যের উদ্দেশে গোপনে ৫০০ লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে ২৫০টি জুলাই যুদ্ধা, বাকি অর্ধেক জুলাই রাজবন্দীদের দেয়ার কথা ছিল। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর সেই লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল আরও বলেন, 'আমি এ তথ্য যাচাই করে ১৭ সেপ্টেম্বর সংবাদ প্রকাশ করি। এরপর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে সন্ত্রাসী রকি ও তার লোকজন আমাকে আজ কাচারী বাজার থেকে তুলে নিয়ে মারধর করে। পরে সিটি করপোরেশনে নিয়ে গিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চেম্বারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং জোর করে ক্ষমা চাইতে বলে। আমি অন্যায় করিনি, তাই ক্ষমা চাইনি। আমি ন্যায়বিচার চাই।'
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, 'আমরা শুধু উদ্বিগ্ন নই, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। লিয়াকত আলী বাদলের মত একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রংপুর বিভাগের সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব। তাঁকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে, যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার।'
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, 'হামলার সাথে যারা জড়িত তাদের অতিদ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। মাস্টারমাইন্ড সিটি করপোরেশনের যদি কেউ থাকে তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় সারা দেশে সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।'
আরও পড়ুন: নরসিংদীতে হামলার শিকার যমুনা টিভির সাংবাদিক
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রিপোর্টাস ক্লাব রংপুরের সভাপতি শাহ্ বায়েজিদ আহমেদ বলেন, 'সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করবে এটাই গণতন্ত্রের মূলনীতি। সংবাদ প্রকাশের কারণে একজন সাংবাদিককে তুলে এনে মারধর করা নজিরবিহীন ও চরম উদ্বেগজনক। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমার প্রত্যাহার চাই।'
বক্তারা জানান, সাংবাদিকের ওপর হামলা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা। তারা অবিলম্বে প্রধান নির্বাহী উম্মে ফাতেমার প্রত্যাহার ও হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। অন্যথায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
আগামী সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় মানববন্ধনসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের সামনের অবস্থান কর্মসূচির পালন করছেন।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা মুঠোফোনে বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। যদি কেউ সিঙ্গেল প্রমাণ করতে পারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তা মেনে নেব। ডিসি অফিসের মিটিংয়ে আছি বলে ফোন কেটে দেন।'
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, 'আমরা ঘটনাটি শুনেছি। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের আইনে আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে একজনের নাম জানতে পেরেছি।'