এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরাইলের চলমান হামলা ও গুপ্তহত্যার মিশন নিয়ে গর্ব করেছেন নেতানিয়াহু। বলেছেন, ইসরাইলি হামলা মধ্যপ্রাচ্যের চেহারাই বদলে দিচ্ছে।
গাজায় চলমান গণহত্যার মধ্যে আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সাধারণ বিতর্ক পর্বের চতুর্থ দিনের শুরুতে বক্তব্য দিতে পোডিয়ামে দাঁড়ান ইসরাইলের নেতানিয়াহু। কিন্তু বরাবরেই মতো এবারও অপমানজনক পরিস্থিতির মুখে পড়েন তিনি।
তার মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বহু প্রতিনিধি প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াকআউট করেন। জাতিসংঘের অধিবেশন কক্ষ কার্যত খালি হয়ে যায়। টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, শুধুমাত্র আরব ও মুসলিম নেতারাই আজ ওয়াকআউট করেননি। তাদের সঙ্গে সঙ্গে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান আফ্রিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরাও।
আরও পড়ুনণ: জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর বক্তব্য শুরু হতেই ওয়াকআউট প্রতিনিধিদের
তাদের এ ওয়াক আউট থেকে নজর সরাতে নেতানিয়াহুর সমর্থকরা জোরে জোরে তালি দেয়। এর মধ্যে নেতানিয়াহুর স্ত্রী ও নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামসও ছিলেন। কক্ষে যে কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন তাদের উদ্দেশেই বক্তব্য দেন নেতানিয়াহু।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, নেতানিয়াহু তার বক্তব্য শুরু করেন গাজায় ইসরাইলি জিম্মিদের প্রসঙ্গ দিয়ে। বলেন, ‘গাজার অন্ধকূপে আটকে থাকা আমাদের প্রিয় জিম্মিদের পরিবার, ইসরাইল আপনাদের জন্য লড়াই করছে।’
যদিও অভিযোগ রয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে নেতানিয়াহুর অনিচ্ছার কারণেই তাদের মুক্তি আটকে আছে। এরপর তিনি একটি মানচিত্র তুলে ধরেন- যা তার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বক্তৃতাগুলোতে একটি সাধারণ চর্চা। ওই মানচিত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘ইরান সন্ত্রাসের অক্ষশক্তি’।
এরপর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে হামলার প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। গর্বভরে তিনি লেবাননে নির্বিচারে পেজার বিস্ফোরণ ঘটানো ইসরাইলি অভিযানের কথা বলেন। যা হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ইসরাইলি বসতি সম্প্রসারণে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান আব্বাসের
তার কথায়, ‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, সেই বিপারগুলো কথা, পেজারগুলোর কথা, আমরা হিজবুল্লাহকে পেজার বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছিলাম এবং বিশ্বাস করুন, এর মাধ্যমে তারা একটা বার্তা পেয়েছে।’
এরপর তিনি সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের পতনের কৃতিত্বও জাহির করেন। যদিও আসাদের সরকারের পতন ঘটানো বিদ্রোহীদের আক্রমণের কথা উল্লেখ করেননি। এছাড়া তিনি হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ, শীর্ষ হামাস কর্মকর্তা, হুতি নেতা এবং ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যার দিকেও ইঙ্গিত করেন।
গাজা উপত্যকায় বর্বরতা চালানোয় অনেক মিত্র দেশ ইসরাইলের সমালোচনা শুরু করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো দেশ সম্প্রতি ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, যেসব বিশ্বনেতা প্রকাশ্যে ইসরাইলের সমালোচনা করেন, তারা গোপনে ধন্যবাদ জানান। এর কারণ ইসরাইল তাদের হয়ে লড়াই করছে। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আপনারা জানেন, ইসরাইল আপনাদের হয়ে লড়াই করছে।’
আরও পড়ুন: গ্রেফতারের ভয়েই কি ইউরোপের আকাশসীমা এড়িয়ে গেলেন নেতানিয়াহু
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের দরজার পেছনের গোপন কথা জানাতে চাই। অনেক বিশ্বনেতা যারা প্রকাশ্যে আমাদের সমালোচনা করেন। গোপনে তারা আমাদের ধন্যবাদ জানান। তারা আমাকে বলেন, আমাদের অসাধারণ গোয়েন্দা সেবাকে তারা কতটা গুরুত্ব দেয়। আমাদের এসব গোয়েন্দা সেবা এসব দেশের রাজধানীতে অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলা আটকে দিয়েছে। অসংখ্য মানুষের জীবন রক্ষা করেছে।’
]]>