১. নিয়ত ঠিক না থাকা। কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কোরবানি করতে হবে। লোক দেখানো, গোশত খাওয়া কিংবা কোরবানি না দিলে মানুষ কি বলবে? এ জাতীয় নিয়ত থাকলে কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। কোরবানির কোন সাওয়াব পাওয়া যাবে না। কেননা, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
قال رسول الله صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم إنَّما الأَعمالُ بالنِّيَّات রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যাবতীয় কাজের ফল নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। (বুখারি: ১)
২. ঈদের আগের দিন পশু জবেহ করা। বর্তমানে সৌদির সাথে মিলিয়ে ঈদ করার কারণে কেউ কেউ সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে কোরবানিও করে থাকেন। এর দ্বারা তাদের কোরবানি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: আরাফার দিন নবীজি যে দোয়া করতেন
َعَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ قَالَ: الْأَضْحَى يَوْمَانِ بعد يَوْم الْأَضْحَى. হজরত নাফি‘ রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, কোরবানির দিনের পরেও আরো দু’দিন কোরবানির অবশিষ্ট থাকে। (মুআত্তা মালিক, হাদীস-১৭৭৪) অর্থাৎ তিন দিন কোরবানি করা যায়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ ই জিলহজ্জ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এ বছর শনি রবি ও সোমবার।
৩. ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করা। ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করলে কোরবানি শুদ্ধ হয় না। কেননা, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
قَالَ خَطَبَنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ النَّحْرِ قَالَ " إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا، وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ عَجَّلَهُ لأَهْلِهِ، لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَىْءٍ নাবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির দিন আমাদের উদ্দেশে খুৎবা দেন। তিনি বলেন, আজকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হল নামাজ আদায় করা। অতঃপর ফিরে এসে কোরবানি করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমাদের রীতি পালন করল। যে ব্যক্তি নামাজের পূর্বেই জবেহ করবে, তা শুধু গোশ্তের জন্যই হবে, যা সে পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। কোরবানির সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৯৬৮)
যে এলাকা বা শহরে একাধিক স্থানে জুমা ও ঈদের নামাজ পড়া হয় সেখানের কোন এক স্থানে ঈদের নামাজ আদায় হয়ে গেলে সর্বত্র কোরবানি করা বৈধ হয়ে যায়। (আল বাহরুর রায়েক,৮/৩২২, শামী ৫/২০২ ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ২৬/৩৪৫)
৪. পশু সঠিক ভাবে জবেহ না করা। প্রথমে যিনি বিসমিল্লাহ বলে জবেহ করবেন তাকেই পশুর গলার চারটি রগ (খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং রক্ত চলাচলের মোটা দুটি রগ) কাটতে হবে। যদি কোন কারণে তিনটি রগ কাটার আগেই তিনি ছুরি সরিয়ে ফেলেন তাহলে পরবর্তী ব্যক্তিকে অবশ্যই বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। অন্যথায় এ পশুর গোশত খাওয়াও হালাল হবে না। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪ আল বাহরুর রায়েক,৮/৩০৯, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ২৬/১৪২)
আমাদের দেশে এই সমস্যাটা বেশি দৃষ্টিগোচর হয়। কোরবানি দাতা কিংবা কোন আলেম জবেহ করলে একটু রক্ত বের হলেই কসাই ছুরি নিয়ে নেন এবং বিসমিল্লাহ না পড়েই জবেহ করতে থাকেন। যা আমাদের কোরবানি নষ্ট হওয়া এবং গোশত খাওয়া হারাম হওয়ার কারণ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা আবশ্যক।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ ঢাকা, খতিব, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, পরিচালক, দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ
]]>