যে আমলের জন্য অজু ফরজ ও ওয়াজিব

অজু ইসলামের পবিত্রতার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অজু আরবি শব্দ। এর অর্থ পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও স্বচ্ছ। পারিভাষিক অর্থে বিশেষ নিয়মে বিভিন্ন অঙ্গ ধোয়াকে অজু বলা হয়। অজু পবিত্রতার মাধ্যম। মুসলমানদের মধ্যে শারীরিক পবিত্রতা লাভের জন্য গোসলের পর অজুর স্থান।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নামাজের জন্য অজু করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,

 

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡهَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ

 

অর্থ: হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাজের জন্য উঠবে, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসাহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। (সুরা মায়েদা: ৬)

 

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় অজুর ফরজ কাজ চারটি। পুরো চেহারা ধোয়া, উভয় হাত কুনুইসহ ধোয়া, মাথা মাসাহ করা এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ চারটি কাজ করলে অজু হয়ে যায়। এ ছাড়াও অজুর অনেক সুন্নত রয়েছে, দোয়া রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে অজু পরিপূর্ণ হয় এবং সওয়াব লাভ হয়।

 

যে আমলের জন্য অজু করা ওয়াজিব

 

তাওয়াফের জন্য অজু ওয়াজিব। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তওয়াফকে নামাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 

الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ صَلاةٌ إلا أَنَّكُمْ تَتَكَلَّمُونَ فِيهِ অর্থ: বায়তুল্লাহর তওয়াফ নামাজের মতো; তবে আপনারা তওয়াফের মধ্যে কথা বলতে পারেন। (তিরমিজি: ৯৬০)

 

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, যখন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফ করতে চাইতেন তখন তিনি ওজু করে নিতেন। (মুসলিম: ১২৯৭)

 

যে আমলের জন্য অজু করা ফরজ

 

নামাজ

 

নামাজের জন্য অজু করা ফরজ। ফরজ বা নফল সব ধরনের নামাজের জন্য অজু করা আবশ্যক। এটি ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না। নামাজের সময় অজু ভেঙে গেলে নামাজও ভেঙে যায়।

 

জানাজা

 

জানাজার নামাজের জন্যও অজু করা ফরজ। তবে পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে জানাজার নামাজ একেবারে সন্নিকটে এবং অজু করতে গেলে জানাজার নামাজের ৪ তাকবিরই ছুটে যাবে, তাহলে তায়াম্মুম করে জানাজার নামাজ পড়া যায়।

 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, 

 

অজু করতে গেলে যদি জানাজার নামাজ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তা হলে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ুন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১১৫৮৬)

 

এটা একেবারে অপারগতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অজু করে যদি জানাজার নামাজের শুধু শেষ তাকবির পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে অজু করেই জানাজায় শরিক হতে হবে।

 

কোরআন স্পর্শ করা

 

কোরআন স্পর্শ করার জন্য অজু ফরজ। অজু ছাড়া কোরআন স্পর্শ করা নাজায়েজ। যে গ্রন্থের অধিকাংশ লেখাই কোরআনের আয়াত তা স্পর্শ করার জন্যও অজু থাকা আবশ্যক। এ ছাড়া অন্যান্য গ্রন্থে কোরআনের আয়াত লিখিত থাকলে অজু ছাড়া ওই আয়াত স্পর্শ করা নাজায়েজ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন,

 

اِنَّهٗ لَقُرۡاٰنٌ کَرِیۡمٌ فِیۡ کِتٰبٍ مَّکۡنُوۡنٍ لَّا یَمَسُّهٗۤ اِلَّا الۡمُطَهَّرُوۡنَ تَنۡزِیۡلٌ مِّنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ

 

অর্থ: নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া। তা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাযিলকৃত। (সুরা ওয়াকেয়া: ৭৭-৮০)

 

তেলাওয়াত ও শোকরের সিজদা

 

নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী তেলাওয়াতের সিজদা ও শোকরের সিজদার জন্যও অজু ফরজ। যেহেতু তেলাওয়াত ও শোকরের সিজদা নফল নামাজের মতো, তাই এ সিজদাগুলোর জন্য নামাজের সব শর্ত প্রযোজ্য হবে। তাই তেলাওয়াত ও শোকরের সিজদায় নামাজের মতোই সতর ঢাকা, কিবলামুখী হওয়া, শরীর-পোশাক পবিত্র হওয়া ও অজু-গোসল থাকা জরুরি।

]]>