২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলে নজিরবিহীন রকেট হামলা চালায়। এতে প্রায় ১২০০ ইসরাইলি নিহত হন। একইসঙ্গে ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল ওই দিন থেকেই গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে।
প্রাথমিকভাবে, সংঘাত শুধু কয়েক সপ্তাহের জন্য চলতে পারে বলে ধারণা করা হলেও তা ১৫ মাস ধরে অব্যাহত থাকে।
গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ইসরাইলের নৃশংসতায় ৪৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। নিহতদের মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার শিশু। আহত ১ লাখ ১০ হাজার মানুষের একটি বড় অংশ এখন স্থায়ী শারীরিক অক্ষমতার শিকার।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতির ‘রোডম্যাপ’ দিলেন বাইডেন
এছাড়াও প্রায় ১০ হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হতাহতের পাশাপাশি ইসরাইলি হামলায় গাজার ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদ, স্কুল, দোকানপাট এবং অফিসসহ বাদ যায়নি কিছুই। অঞ্চলটির ৮০ শতাংশ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রায় ১৯ লাখ মানুষ এখন আশ্রয়শিবিরে রয়েছেন। যেখানে পর্যাপ্ত খাদ্য, পানির অভাবে জীবনযাপন করছেন তারা। এছাড়া তীব্র শীত ও অনাকাঙিক্ষত বৃষ্টি তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
অঞ্চলটির বেশিরভাগ হাসপাতাল ধ্বংস হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ, চিকিৎসক এবং সরঞ্জামের ব্যবস্থা। হামলায় নিহত হওয়ার পাশাপাশি গাজার বাসিন্দারা নানা সংক্রামক রোগেও ভুগছেন। ২০২৪ সালে প্রায় ১২ লাখ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং ৫ লাখের অধিক ডায়রিয়ায় আক্রান্তের ঘটনা রেকর্ড করা হয়।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হামলা জোরদার ইসরাইলের, নিহত ৭৩
যুদ্ধের কারণে গাজাবাসী আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তার ওপরই নির্ভলশীল। কিন্তু ইসরাইলি বাধার কারণে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে গড়ে প্রতিদিন মাত্র ২৪টি ট্রাক গাজায় সাহায্য নিয়ে প্রবেশ করেছে। এর ফলে প্রায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ চরম খাদ্য সংকটের পাশাপাশি মানবিক বিপর্যয়ে পড়ছে।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনলেও গাজা পুনর্গঠনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাহায্য অপরিহার্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কীভাবে বাস্তবায়ন হবে যুদ্ধবিরতি?
গাজার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পাশাপাশি বন্দি বিনিময়ের কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের কার্যক্রম নিয়ে স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়া হলেও বাইডেন জানান, পরবর্তী পর্যায়ে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ শেষ হবে গাজায়।
আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে চুক্তিটি। প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে ছয় সপ্তাহ। এ সময় গাজায় হামলা-সংঘাত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। যুদ্ধবিরতি শুরুর দিন ৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এরপর ৬ সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেয়া হবে আরও ৩৩ জনকে। এদের মধ্যে নারী, বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থদের প্রাধান্য দেয়া হবে।
এছাড়া গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা ঘরে ফেরার অনুমতি পাবেন। পাশাপাশি প্রতিদিন ৬০০টি পর্যন্ত ত্রাণবাহী ট্রাক উপত্যকাটিতে প্রবেশ করতে পারবে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি চুক্তির কথা নিশ্চিত করল ইসরাইল, মন্ত্রিসভার বৈঠকের ডাক নেতানিয়াহুর
যুদ্ধবিরতির সাতদিনের মধ্যে খোলা হবে রাফাহ সীমান্ত। আহত ফিলিস্তিনিরা চিকিৎসার জন্য গাজার বাইরে যেতে পারবেন। এছাড়া মিশর-গাজার মধ্যকার ফিলাডেলফি করিডোর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর ৫০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি সরে যাওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ কবে থেকে শুরু হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বিরতির প্রথম স্তর শেষ হওয়ার আগেই। এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি নেতার বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, বিরতির ১৬তম দিন থেকে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে বাইডেনের দাবি, বিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ শেষ হবে গাজায়।
]]>