একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানি গন্তব্য। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দফতরের (ইউএসটিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটিতে ৮৪০ কোটি ডলার রফতানির বিপরীতে বাংলাদেশ আমদমানি করেছে ২২০ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি যেখানে ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ভারতের সঙ্গে ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ও ভিয়েতনামের সঙ্গে ১২৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের দিক থেকে ৬০০ কোটি ডলারের বেশি এই বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পহেলা আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। অথচ ভিয়েতনামের সঙ্গে ১২ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার ঘাটতির পরও শুল্কারোপ হচ্ছে মাত্র ২০ শতাংশ। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে ৪ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার ঘাটতির পরও চলমান রয়েছে আলোচনা।
আরও পড়ুন: শুল্কারোপের বিষয়টি অপ্রত্যাশিত, তবে বৈঠকে ইতিবাচক ফল আসবে: বাণিজ্য সচিব
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন রেখে উদ্যোক্তারা বলছেন, মার্কিন প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে প্লাস্টিক, চামড়া, ইলেক্ট্রনিক্সসহ উদীয়মান রফতানি খাত। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, যদি ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক থাকে, তাহলে দেশের নতুন নতুন শিল্প বা ভ্যালু এডেড শিল্পগুলোতে একটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। কারণ যারা ট্যাক্স বেনিফিট বেশি পেয়েছে, সেসব দেশেই এ ধরনের শিল্পগুলো বেশি গড়ে উঠবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রস্তাবিত পারস্পরিক শুল্ক চুক্তিতে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশের ওপর বাড়তি শুল্কারোপ করলে বাংলাদেশকেও তা করতে হবে। এমনকি কোনো দেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিলে বাংলাদেশকেও দিতে হবে।
এ পরিস্থিতিতে সতর্কতার সঙ্গে শুল্কভার কমানোর আলোচনা এগিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রফতানিকারকরা।
ফজলে শামীম এহসান বলেন, এমন কোনো কিছু করা যাবে না, যাতে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। আগে দেশ, তারপর সবকিছু। এই মুহূর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে অন্য কিছু চিন্তা করার সুযোগ নেই।
এদিকে, মার্কিন শর্ত মানতে গিয়ে যেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আইন ভঙ্গ করে বাড়তি চাপে না পড়ে সরকারক, সেদিকে বিশেষ নজর রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরাও।
আরও পড়ুন: উইন-উইন সমাধানে ওয়াশিংটনের সঙ্গে শুল্ক চুক্তিতে আগ্রহী ঢাকা: প্রেস সচিব
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এরই মধ্যে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালার বাইরে গিয়ে দ্বিপাক্ষিকভাবে কিছু দেয়ার জন্য যদি আমেরিকা চাপ প্রয়োগ করে এবং যদি আমরা সেটা মেনে নিই তাহলে হয়ত শুল্ক কমতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অন্যান্য সমস্যার কথাও বিবেচনায় নিতে হবে।
এর আগে গত ২ এপ্রিল ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার এক সপ্তাহ পর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে তিন মাসের সময় বেঁধে দিয়েছিলো ট্রাম্প প্রশাসন। আর সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে।
]]>