যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগার থেকে আরও একজনের মুক্তি

৩ সপ্তাহ আগে
যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগার থেকে আরও এক বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। মোহাম্মদ আবদুল মালিক বাজাবু নামে ওই বন্দি এরই মধ্যে নিজ দেশ কেনিয়ায় ফিরেছেন। গত ১৭ বছর ধরে তিনি গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দি ছিলেন।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদন মতে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন গত মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) আবদুল মালিক বাজাবুর মুক্তির বিষয়টি ঘোষণা করে। জানায়, বাজাবুর কেনিয়ায় প্রত্যাবাসনের বিষয়টি গত মাসে পার্লামেন্টকে অবহিত করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।

 

আল কায়েদার পূর্ব আফ্রিকার শাখার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০০৭ সালে কেনিয়ার মোম্বাসায় আবদুল মালিক বাজাবুকে গ্রেফতার করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হয়। এর কয়েক সপ্তাহ পর তাকে কেনিয়া থেকে গুয়ানতানামো বে কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

 

গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দি পর্যালোচনা পরিষদ পিরিয়ডিক রিভিউ বোর্ড ২০২১ সালে তাদের এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে জানায়, আবদুল মালিক বাজাবু আর ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি নন’। এরপর তার মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়।

 

আরও পড়ুন: গুয়ানতানামো থেকে ২১ বছর পর মুক্তি পেলেন সৌদি প্রকৌশলী

 

মুক্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত রিপ্রাইভ ইউএস নামের একটি সংগঠন বাজাবুর মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, কেনিয়ার কর্তৃপক্ষ ও মার্কিন সামরিক বাহিনী তাকে নির্যাতন করেছে।

 

আবদুল মালিক বাজাবুকে আইনি সহায়তা দেয়া একজন আইনজীবী বলেছেন, নিরীহ একজন ব্যক্তিকে তার জীবনের সেরা সময়টায় বন্দি রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাকে এমন একটা সময়ে তার স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল, যখন তাকে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।

 

ওই আইনজীবী আরও বলেন, গত ১৭ বছর ধরে কারাগারে থাকাকালে তার সন্তানরা বড় হয়ে গেছে। তাকে এভাবে বন্দি রাখায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কখনই পূরণ করা যাবে না। তবে মার্কিন সরকার অন্তত যেটা করতে পারে, সেটা হল আবদুল মালিক যাতে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সুযোগ করে দেয়া।’

 

তথাকথিত নাইন-ইলেভেন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করে। সেই সময় ২০০২ সালে গুয়ানতানামো বে কারাগার চালু করা হয়। কিউবার কাছে মার্কিন এক সামরিক ঘাঁটিতে এই কারাগার অবস্থিত। 

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত আদালতে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে, সেখানে সেগুলো নেই। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’র নামে মার্কিন সরকারের নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি স্থায়ী প্রতীক হয়ে উঠেছে এই কারাগার। 

 

আরও পড়ুন: গুয়ানতানামো কারাগার থেকে ২০ বছর পর মুক্তি পেলেন মজিদ

 

এ কারাগারে বন্দিদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন করা হয় বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। যেখানে বিনা অভিযোগে অনেককে আটকে রাখা হয়। এমনকি কেন আটকে রাখা হয়েছে, তা জানারও সুযোগ ও আইনি সহায়তা পায়না বন্দিরা।

 

এই কারাগারে এক সময় ৮০০ বন্দি ছিল। পেন্টাগনের হালনাগাদ তথ্য মতে, এই কারাগারে এখনও ২৯ জন বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জন স্থানান্তর করার মতো উপযুক্ত পর্যায়ে রয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই ‘কালো এলাকা’ হিসেবে পরিচিত সিআইয়ের গোপন ডেরায় থাকতেন।

 

সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো। যার অনুমোদন করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরবর্তী সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গুয়ানতানামো বে কারাগার বন্ধ করার ঘোষণা দেন। তবে আজও তা বন্ধ করা হয়নি। 

 

আরও পড়ুন: মুক্তি পেলেন গুয়ানতানামোর সবচেয়ে বয়স্ক বন্দি

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন