যুক্তরাষ্ট্রে টেলিভিশনের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় এখন ইউটিউব। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশটির ৬৫ শতাংশ তরুণ টেলিভিশনের চেয়ে এখন ইউটিউবকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
চলতি শতকের শুরুর দিকে ইন্টারনেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছিল হু হু করে। ঠিক তখনই তিন তরুণ জাওয়েদ করিম, স্টিভ চেন ও চ্যাড হার্লি শুরু করেন নতুন একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট তৈরির কাজ। উদ্দেশ্য ছিল সহজে ভিডিও আপলোড, দেখা ও শেয়ার করা।
সেই লক্ষ্যে ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ডোমেইন নিবন্ধনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় ইউটিউবের। আর প্রথম ভিডিও ‘মি অ্যাট দ্য জু’ আপলোড করা হয় ২৩ এপ্রিল।
ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস এবং বিনামূল্যে কনটেন্ট আপলোডের সুযোগে রাতারাতি জনপ্রিয়তা বাড়ে ইউটিউবের। তবে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বাড়তে থাকে সার্ভারের খরচ এবং কপিরাইট আইনি ঝুঁকি।
আরও পড়ুন: দেশেই তৈরি হচ্ছে ফেসবুক-ইউটিউবের বিকল্প!
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এগিয়ে আসে গুগল। ২০০৬ সালে ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারে ইউটিউব কিনে নেয় সার্চ জায়ান্টটি। তখন থেকেই ইউটিউব এক নতুন যুগে প্রবেশ করে- বাণিজ্যিকীকরণ ও কনটেন্ট মনেটাইজেশনের যুগে।
বিশ্বজুড়ে বিনোদন, সংবাদ, ও তথ্যের সবচেয়ে বড় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম- ইউটিউবের বয়স এখন ২০ বছর। বর্তমানে এটি শুধু একটি ওয়েবসাইট নয়, বরং আধুনিক মিডিয়া বিপ্লবের প্রতীক।
শুধু ভিডিও নয়, ইউটিউব এখন একটি সংস্কৃতি। শর্টস, লাইভ স্ট্রিমিং, প্রিমিয়াম, টিভি, গেমিং প্ল্যাটফর্ম সবমিলিয়ে তৈরি হয়েছে একটি বহুমাত্রিক ডিজিটাল ইকোসিস্টেম।
শুধু প্ল্যাটফর্ম নয়, ইউটিউব হয়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের টেলিভিশন। এক গবেষণায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫ শতাংশ তরুণ টেলিভিশনের চেয়ে ইউটিউবকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
আরও পড়ুন: ইউটিউবে কী দেখছে মানুষ?
মিডিয়ার ইতিহাসে এটাই প্রথম যেখানে একজন সাধারণ নাগরিক হতে পারে বিশ্বজুড়ে লক্ষ দর্শকের সাংবাদিক বা নির্মাতা। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে আয় হয়েছে ২০২৪ সালে ১৭.৩৩ বিলিয়ন ডলার।
ইউটিবের অগ্রগতির পাশাপাশি কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এর মাধ্যমে সহজে ভুয়া খবর ও গুজব ছড়ায়, কারণ যাচাই ছাড়াই যে কেউ ভিডিও আপলোড করতে পারে।
অ্যালগরিদম ভিউ বাড়াতে নাটকীয় ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্টকে উৎসাহ দেয়ায় এতে সাংবাদিকতার মানহানি হয়। ইউটিউব রাজস্ব টেনে নেওয়ায় মূলধারার গণমাধ্যম আর্থিক চাপে পড়ছে। সংবাদ ও মতামতের ভেদ মুছে গিয়ে দর্শক বিভ্রান্ত হচ্ছে, যা মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা কমাচ্ছে।
যদিও ২০ বছরের ধারাবাহিক অভিযাত্রায় ইউটিউব দেখিয়েছে কিভাবে একটি অনলাইন ভিডিও সাইট হয়ে উঠতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিডিয়া বিপ্লবের নাম। আর এই আধিপত্য আরও বাড়বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল ইন্টারঅ্যাকশন এবং কনটেন্টের ভবিষ্যৎ যাত্রায় বলছেন বিশ্লেষকরা।
]]>