আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই বাম পাশে থাকা ফেরেশতা (যিনি গুনাহ লেখেন) মুসলিম বান্দা যখন ভুল করে বসে, তখন ছয় ঘণ্টা কলম থামিয়ে রাখেন। যদি বান্দা এই সময়ের মধ্যে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সেই গুনাহ লেখা হয় না। আর যদি ক্ষমা না চায়, তখন একটি গুনাহ হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। (সহিহুল জামে: ২০৯৭)
এই ৬ ঘণ্টা, আল্লাহর রহমতের এক বিশাল সুযোগ
এই অবকাশটি আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি পাপ করার লাইসেন্স নয়, বরং তওবা ও ইস্তেগফারের সোনালি সুযোগ। এবার জেনে নিন, কীভাবে এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করা যায়
আরও পড়ুন: তাবলিগের সমাধান নিয়ে যা বললেন বায়তুল মোকাররমের খতিব
১. দ্রুত তওবা ও ইস্তেগফার করুন
যখনই বুঝবেন কোনো গুনাহ হয়ে গেছে, তখনই দেরি না করে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে। তওবা ও ইস্তেগফারই হলো এই সময়ের সেরা আমল।
রসুলুল্লাহ রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ عَبْدٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللَّهَ، إِلَّا غَفَرَ لَهُ যে বান্দা কোনো গুনাহ করে, তারপর সুন্দরভাবে অজু করে, দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহ অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেন। (সুনানুত তিরমিজি:৩০০৬)
তওবার সময় এ দোয়াটি বেশি করে পড়া উত্তম
أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ الَّذِي لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি। আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বশক্তিমান। আমি তারই দিকে ফিরে যাচ্ছি। (সুনানু আবি দাউদ:১৫১৭)
২. সদকার মাধ্যমে গুনাহ মোচনের চেষ্টা করুন
সদকা কেবল দান নয়, বরং গুনাহ মোচনের শক্তিশালী উপায়। রসুলুল্লাহ রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ সদকা গুনাহ মুছে দেয়, যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়। (মুসনাদু আহমদ:২২০১৬) রসুলুল্লাহ রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো, যদিও তা খেজুরের অর্ধেক অংশ দিয়েই হয়। (সহিহ বুখারি:১৪১৭)
৩. নেক আমল বৃদ্ধি করুন
গুনাহ মুছিয়ে ফেলার আরেকটি উত্তম উপায় হলো নেক আমল করা। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, নিশ্চয়ই সৎকর্ম অসৎকর্ম মুছে দেয়। (সুরা হুদ:১১৪) রসুলুল্লাহ রসুলুল্লাহ রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যেমন কেউ প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করলে শরীরে কোনো ময়লা থাকে না, তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুনাহগুলো মুছে দেয়। (সহিহ মুসলিম:১৪০৮)
সতর্কবার্তা সুযোগকে অবহেলা নয়
এই ছয় ঘণ্টার অবকাশ যেন আমাদের গাফিলতির কারণ না হয়। এটি পাপের সুযোগ নয়, বরং তওবার সুযোগ। কারণ, মৃত্যুর সময় সম্পর্কে কেউ জানে না। আল্লাহ আমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। তিনি চান, আমরা তার কাছে ফিরে আসি, ক্ষমা চাই, এবং গুনাহ থেকে মুক্ত হই। اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَتُبْ عَلَيْنَا، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ হে আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি রহম করুন, আমাদের তওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তওবার তাওফিক দান করুন। আমিন।
]]>