স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছাতে যশোরে গ্রামীণ পর্যায়ে ২৮৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে সরকার। যার মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৬০টি, বাঘারপাড়া উপজেলায় ২৩টি, অভয়নগর উপজেলায় ২৬টি, মণিরামপুর উপজেলায় ৪৭টি, কেশবপুর উপজেলায় ২৯টি, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৩২টি, শার্শা উপজেলায় ৩৯টি ও চৌগাছা উপজেলায় ২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।
এসব ক্লিনিক থেকে বছরে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বিনা খরচে চিকিৎসার পরামর্শ ও ওষুধ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে জ্বর, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, ব্যথা, সর্দি, কাশি, চুলকানি, দাদ, অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, প্রেশারসহ নানা রোগের ওষুধ সরবরাহ করা হয় তাদের। তবে গত ছয় মাস ধরে কোন প্রকারের ওষুধ পাচ্ছেন না সেবা প্রত্যাশীরা।
আরও পড়ুন: হার্টের রোগীকে ‘লাথি মেরে’ আহত করলেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক
ক্লিনিক গুলোতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। মিজানুর রহমান নামে এক সেবাগ্রহিতা বলেন, চার দিন ধরে জ্বর ও গায়ে ব্যথা। জ্বরের কারণে ভ্যান চালাতে পারছিলাম না। তাই এসেছিলাম কমিউনিটি ক্লিনিকে; কিন্তু কোনো ওষুধ দেয়নি। আমাদের মতো গরিব খেটে খাওয়া মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এটা। সরকার ওষুধ দিতে না পারলে ক্লিনিকগুলো খুলে রেখেছে কেন?
নজরুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, ‘গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ নিতে এসেছিলাম। আগে এখান থেকে ফ্রি পেতাম, তবে অনেক দিন থেকে আর পাচ্ছি না। এখন দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে।’
মিতা বিশ্বাস নামে এক গৃহিণী বলেন, ‘হাত-পায়ে চুলকানি হয়েছে। ক্লিনিকে এসেছি ওষুধ নিতে, কিন্তু বলল ওষুধ নেই।’
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা বলছেন, ওষুধ ও জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও রোগীদের পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। যশোর সদরের খোলাডাঙ্গা কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের সিএইচসিপি কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘৬ মাস ধরে ওষুধের বরাদ্দ নেই। প্রতিদিন ৭০–৮০ জন রোগী আসে, কিন্তু প্রত্যেককে খালি হাতে ফেরাতে হচ্ছে। কবে ওষুধ আসবে, তা জানি না।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল / জরুরি বিভাগে ‘মৃত্যুর মিছিল’, চিকিৎসক সংকটে পদে পদে ভোগান্তি
যশোর সদরের ধোপাখোলা কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের সিএইচসিপি রিফাত আরা তুলি বলেন, ‘আমরা রোগীদের আয়রন, জিংক, শিশুদের শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, প্রেশারের ওষুধসহ ২২ ধরনের ওষুধ দিই। গত এপ্রিল মাসে এক কার্টন ওষুধ পেয়েছিলাম, আগে প্রয়োজন অনুযায়ী তিন কার্টন পেতাম। চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। এখন ওষুধ দিতে পারছি না।’
মণিরামপুরের নেবুগাতির সিএইচসিপি মিঠু বিশ্বাস বলেন, ‘চলতি বছরের শুরুতে ওষুধ পেয়েছিলাম, এরপর আর আসেনি। পুরোনো ওষুধ দিয়ে কোনো রকমে চালাচ্ছি। রোগীরা জ্বর, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, ব্যথা, সর্দি–কাশি, চুলকানি, দাদ, অ্যালার্জি, ক্যালসিয়ামের ওষুধ চায়। ওষুধ না দিতে পারায় শুধু পরামর্শ দিয়েই বিদায় দিচ্ছি। ওষুধ না থাকার খবর জানতে পেরে এখন রোগী আগের মতো আসে না।’
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ওষুধ ও জনবল সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন মাসুদ রানা বলেন, ‘আট মাস ধরে ওষুধের সংকট। আমরা প্রতি মাসেই চাহিদা পাঠাচ্ছি, তবে আসছে মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ। প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। তবে দ্রুত এটি স্বাভাবিক হবে বলে ওষুধ প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে।’
]]>