খেজুরের রস আহরণের মধ্য দিয়েই গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ। যশোরাঞ্চলের গ্রামে গ্রামে এখন খেজুর গাছ প্রস্তুতির কাজ তৎপরভাবে চলছে। রাস্তার ধারে বা জমির আইলে থাকা খেজুর গাছের মাথা পরিষ্কার করতে ভোরবেলা থেকেই ছুটছেন গাছিরা। ধারালো দা দিয়ে নিপুণ হাতে খেজুর গাছের মাথা পরিষ্কার করছেন।
গাছিরা বলছেন, গাছের মাথা পরিষ্কারের পর গাছগুলোকে দুই সপ্তাহের বিশ্রাম দেয়া হবে। এরপর স্থাপন করা হবে নল, এবং তার পরই শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস আহরণের কাজ। তাদের আশা, আগামী ৪-৫ মাস খেজুরের রস ও গুড় বিক্রির অর্থেই চলবে সংসার।
এদিকে খেজুরের রস সংগ্রাহের প্রস্তুতি সারতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরাও। রিপন আলী নামে এক কৃষক জানান, ‘আমাদের ৮২টি খেজুর গাছ রয়েছে। গত বছর গাছির অভাবে গাছগুলো কাটা সম্ভব হয়নি। চলতি বছর সাতক্ষীরা থেকে একজন গাছিকে আনা হয়েছে এবং তিনি খেজুর গাছ কাটার কাজ শুরু করেছেন। চলতি বছর প্রত্যেক গাছ থেকেই রস পাওয়া যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর প্রতি ভার (কলসি) খেজুর রসের দাম ৪শ’ টাকার ওপরে ছিল। রস ও গুড়ের ভালো দাম থাকায় চলতি বছর সবাই খেজুরগাছ কাটা শুরু করেছেন। এবার রস ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা রয়েছে।’
আরও পড়ুন: আসছে খেজুরের রস-গুড় সংগ্রহের মৌসুম, ভাঁড় তৈরিতে ব্যস্ত দেহাটি গ্রামের মৃৎশিল্পীরা
শুকুর আলী নামের এক গাছি জানান, ‘চলতি বছর ২০০ খেজুর গাছ প্রস্তুত করছি। এর মধ্যে ১০টি গাছ নিজের, বাকি গাছ মানুষের কাছ থেকে ভাগে নেয়া। গত পাঁচ দিন ধরে খেজুর গাছ প্রস্তুতির প্রাথমিক কাজ শেষ করেছি এবং আরও দুই-তিন দিন এ কাজ চলবে। এক সপ্তাহের মধ্যে এসব গাছ চাঁছা করা হবে এবং এর এক সপ্তাহ পর নল বসানো হবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে খেজুর গাছ থেকে রস পাওয়া যাবে।’
আব্দুল লতিফ নামে অন্য এক গাছিও প্রায় ২০০ খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে খেজুরের রস ও গুড়ের দাম ভালো হওয়ায় আগামী চার মাস খেজুরের রস ও গুড় বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে, যা সংসারের কাজে লাগবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) সমরেন বিশ্বাস জানান, ‘চলতি বছর যশোরে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করা সম্ভব হবে। গ্রামের চাষি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাছিরা এরই মধ্যে খেজুর গাছ প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছেন। এই মৌসুমে আহরণ করা রস দিয়ে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন করা যাবে, যার মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষকরা প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আয় করতে পারবেন।’
যশোরের খাঁটি খেজুর গুড়ের দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে জানিয়ে সমরেন বিশ্বাস আরও বলেন, ‘ভেজাল রোধে কৃষি বিভাগ বিভিন্ন সভা ও সেমিনারের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করছে। এমনকি গুড়ে ভেজাল না দেয়ার শপথও পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, যশোরের উৎপাদিত খেজুর গুড় নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকবে না।’
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে ৬ হাজার ৩১৪ জন গাছি রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজ করবেন। এর মাধ্যমে প্রায় ১৬ হাজার কৃষক পরিবার সরাসরি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
]]>
৩ সপ্তাহ আগে
৭







Bengali (BD) ·
English (US) ·