যশোর-৪ আসনে টিএস আইয়ুবকে ঠেকাতে একাট্টা বিএনপির একাংশ

যশোর- ৪ সংসদীয় আসনের বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয় ঈদ পুনর্মিলনী করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী শ্রমিকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাতি ফারাজী মতিয়ার রহমান।

শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে উপজেলার একতারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠান থেকে ফারাজী মতিয়ার রহমানকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানান অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলার বিএনপির নেতারা।


এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যশোর- ৪ সংসদীয় আসনে বিএনপির অন্যতম প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী টিএস আইয়ুবকে ঠেকাতে এবার একাট্টা হয়েছেন আসনটির দুই উপজেলার শীর্ষ নেতারা। ওই মঞ্চে দুই উপজেলার নেতারা হাত উঠিয়ে আইয়ূবকে ‘চাঁদাবাজ ও ফ্যাসিস্ট' আখ্যা দিয়ে তাকে হটাতে একট্টা হওয়ার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে আসনটিতে অভ্যন্তরিন কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন তৃর্ণমূলের নেতাকর্মীরা।


আইয়ুব শিবিরের দাবি, জনপ্রিয়তায় ঈশ্বানীত হয়ে একটি পক্ষ তাকে বিরোধীতা করছেন। আর আইয়ুব বিরোধীদের ভাষ্য, হটাও চাঁদাবাজ, বাঁচাও বিএনপি স্লোগানে দু’ উপজেলার তৃণমূলে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির শুভ সূচনা হয়েছে। এরই মধ্যে দিয়ে আসনটিতে বিএনপির পুনরুদ্ধারের সঙ্গে তৃণমূলের রাজনীতিতে সৃষ্টি হবে নবজাগরণ।


যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। দেশ স্বাধীনের পর ১২টি নির্বাচনের ৮টিতেই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্মসম্পাদক প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব। 

আরও পড়ুন: তারেক রহমান নিজেকে মহানায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন: ডা. রফিক

এরপর  অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান,বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল হাই মনা, জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ।


নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আসনটিতে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একক আধিপত্য বিস্তার করতে আসনটির দুই উপজেলাতেই কমিটি গঠনে একক নিয়ন্ত্রণ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টিএস আইয়ুব। পলাতক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও নেতা এবং ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনেরও অভিযোগ উঠে আইয়ুবের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে যারা আইয়ুবের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন তারাই এখন বিরোধিতা করে রাজপথে নেমেছেন। একাট্টা হয়ে আইযুবের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন নানা বক্তব্য। এতদিন আইযুবের জন্মস্থান বাঘারপাড়াতে নেতাকর্মীরা তাকে বিরোধীতা করলেও শনিবার সেটি নির্বাচনীর এলাকার আরেক উপজেলা অভয়নগরে ছড়িয়ে পড়েছে। বাঘারপাড়া ও অভয়নগরের শীর্ষ নেতারা আইযুবকে হটাতে এবার একসাথে হয়েছেন।


শনিবার দুপুরে আসনটিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয় ঈদ পুনর্মিলনী করেছেন আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী শ্রমিকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাতি ফারাজী মতিয়ার রহমান। উপজেলার একতারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠান থেকে ফারাজী মতিয়ার রহমানকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানান অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলার বিএনপির নেতারা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরেক প্রার্থী আবদুল হাই মনাও। একই মঞ্চে নেতারা হাত উঠিয়ে ঘোষণা দেন আইযুবকে দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে দরকার হলে নেতাকর্মীরা ঢাকাতে যেয়ে অবস্থান নেওয়ার।


অনুষ্ঠানে টিএস আইয়ুব ফ্যাসিস ও দুনীর্তিবাজ আখ্যা দিয়ে মতিয়ার রহমান ফারাজী বলেন, ‘দুনীর্তিবাজ ব্যক্তিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেখতে চাই না। যারা সিন্ডিকেট গড়ে, সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়ে রাজনীতি করে তাদের রুখে দিতে হবে। যারা বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলো না। যারা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা নির্যাতন করেছে, সেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করছে টিএস আইযুব। আমাদের স্বাধীনতাকে হরণ করেছে সে। তার চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। তাই হটাও চাঁদাবাজ, বাঁচাও বিএনপি। চাঁদাবাজ ফ্যাসিবাদের হাতে জনগণ দায়িত্ব তুলে দিতে চায় না। এটা কেন্দ্রীয় নেতাদের বুঝাতে হবে, অবহিত করাতে হবে। দলের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।


বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই মনা বলেন, ‘৩০ বছর আগে এই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দরকার ছিলো। আওয়ামী লীগের গাটছড়া নিয়ে বিএনপি নেতৃত্ব দিচ্ছে টিএস আইয়ুব। আওয়ামী লীগে সাথে আতায়াত করে চলেছে সে। এখন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করছে। এমন ব্যাক্তিকে নেতাকর্মীরা চায় না। তাকে প্রতিহত করতে সবাই এক হতে হবে।’ 

এর আগে দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা বাঘারপাড়া ও অভয়নগর বাজারে টিএস আইযুবকে হটাতে মহড়া দেন।


এদিকে এদিন সন্ধ্যায় অভয়নগরের নওয়াপাড়া বাজারে টিএস আইযুবের অনুসারীরা আনন্দ মিছিল বের করেন। আনন্দ মিছিল হলেও মূলত এটি ছিলো আইযুব বিরোধী শিবিরদের পাল্ট্টা কর্মসূচি বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। 


এ বিষয়ে টিএস আইযুব বলেন, ‘মতিয়ার ফারাজীর সাথে বিএনপির কেউ নেই। সব বহিষ্কৃত ও দুর্নীতিবাজদের নিয়ে জড়ো হয়েছেন তিনি। তারা কখনো আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না। আমি নিজের উপার্জিত টাকায় রাজনীতি করেছি। আমার টাকায় মতিয়ার ফারাজীর চিকিৎসা হয়েছে। তারা এখন আমাকে দুর্নীতিবাজ বলে।’


তিনি আরও বলেন, ‘আমার সাথে তৃণমূলের লোকজন আছে। তারা নামে তালপুকুর ঘটি ডোবে না। তারা জনবিচ্ছিন্ন।’

]]>