যশোর জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক সরোয়ারের এত ক্ষমতা!

১ সপ্তাহে আগে
প্রভাব খাটিয়ে নিজ গ্রামে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিযোগ উঠেছে যশোর জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিনের বিরুদ্ধে। ২০১৬-১৭ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত শুধু নিজ গ্রাম যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামেই প্রায় ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ নিয়েছেন তিনি। এমনকি উন্নয়ন প্রকল্পের নামফলকেও নিজের নাম খোদাই করিয়েছেন। অবশ্য এ বিষয়ে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কোননো সদুত্তর দেয়নি।

যশোরের চৌগাছা উপজেলার ছোট একটি গ্রাম স্বরূপদাহ। সব অঞ্চলে সমহারে উন্নয়নের কথা থাকলেও জেলা পরিষদের বেশির ভাগ প্রকল্প এ গ্রামটি ঘিরেই। স্বরূপদাহ গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, ঈদগাহ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রাস্তার উন্নয়নে অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে জিলা পরিষদ। প্রত্যেকটি উন্নয়ন প্রকল্পের নামফলকে নিজের নাম লিখেছেন সরোয়ার উদ্দিন। যদিও গত আট বছরে স্বরূপদাহ গ্রামে কত টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সে তথ্য জেলা পরিষদ দিতে পারেনি। 


আরও পড়ুন: ঘুষের টাকাসহ পাবনা পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক, পালালেন ঠিকাদার


তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে স্বরূপদাহ গ্রামের সরদারপাড়া ঈদগাহ ময়দান উন্নয়নে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা পরিষদ। ২০২০-২১ অর্থবছরে শাহ আলমের বাড়ি থেকে তরিকুল সরদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়নে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যদিও একই প্রতিষ্ঠানে পর পর দুই অর্থবছরে প্রকল্প বরাদ্দ দেয়ার নিয়ম নেই। তার পরও ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বরূপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণে ৩ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বরূপদাহ হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ৩ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরো ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বরূপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বরূপদাহ পূর্ব পাড়া ঈদগাহে ৩ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরদারপাড়া ঈদগাহে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সবশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বরূপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে আরও ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দের টাকায় কাজ না করে শিক্ষকদের ৩ হাজার টাকা করে ঈদ বোনাস, শিক্ষার্থীদের বেতন সমন্বয় এবং পিকনিকের ব্যবস্থা করেন সরোয়ার উদ্দিন।


স্বরূপদাহ গ্রামের বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বকুল বলেন, ‘সরোয়ার উদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্প বরাদ্দের জন্য ৩০-৪০ শতাংশ হারে ঘুষ আদায় করেছেন। প্রতিটি প্রকল্পের নামফলকে সরোয়ার উদ্দিনের নাম লেখা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার।’


গ্রামবাসীর অভিযোগ, সরোয়ার উদ্দিন এলাকায় প্রচার করেছেন তিনিই বরাদ্দ দিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিন। তার দাবি, প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম হয়নি। সুযোগ ছিল, তাই এলাকার মানুষের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। তবে প্রকল্পের নামফলকে নিজের নাম লেখা উচিত হয়নি।

আরও পড়ুন: আম-ছালা দুটোই গেলো চেয়ারম্যান প্রার্থী আকরামের


এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘জেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পের নামফলকে সরোয়ার উদ্দিনের নাম লেখার সুযোগ নেই। প্রকল্প বরাদ্দের সঙ্গেও তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কীভাবে প্রকল্পফলকে তার নাম লেখা হলো, তা আমার জানা নেই।’


স্বরূপদাহ গ্রামে জেলা পরিষদ কতটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, সে তথ্য জানাতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে জানাতে গেলে নথিপত্র যাচাই করে দেখতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন